বাংলা রচনা

একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা | রচনা | SSC HSC JSC

Rate this post

একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা

বিষয়ঃ রচনা
শ্রেণিঃ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ ১২ SSC HSC JSC

ভূমিকা

গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রকৃতি যখন ঝলসানো রুটির মতো তপ্ত। মাঠঘাট ফেটে চৌচির। গুমোট পরিবেশে গাছের পাতায় গ্রীষ্মের খরতাপে দোহানের ছাপ ও জলাশয় শুকিয়ে কাঠ, ঠিক তখনই ঋতুসন্ধি কালো ঈশান কোণে কালো মেঘ জমা হতে থাকে। গুড়গুড় মেঘ গর্জনের পর কোনাে একদিন নামে বহুপ্রত্যাশিত বর্ষার ফোটা। বর্ষা ঋতুকে স্বাগত জানিয়ে হাসি ফোটে কৃষকের মুখে। শুরু হয় বর্ষাকাল। কবি নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) এমনি বাদল দিনে হয়তো রচনা করেছিলেন-
“আদর গরগর।
         বাদর দরদর
 এ তনু ডরডর
            কাঁপিছে থরথর 
নয়ন ঢলঢল
             কাজলকালাে জল
  ঝরে লাে ঝর ঝর।”

বর্ষণ-সন্ধ্যা

বর্ষাকালের বর্ষণ ও সন্ধ্যার মধ্যে এক অপরূপ মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়। দুয়ের মধ্যে গড়ে ওঠে এক অনন্য ঘনিষ্ঠতা। একটানা রিমঝিম বর্ষণ ও সন্ধ্যার স্নিগ্ধতা মিলে সৃষ্টি হয় অনিন্দ্য সুন্দর পরিবেশের যা মানুষকে নিয়ে যায় সুদূর অতীতে, পেয়ে বসে নস্টালজিয়া। তাইত কবি কণ্ঠে ছন্দের দোলা লাগে –

“হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে
ময়ূরের মতো নাচেরে।”

বর্ষার সন্ধ্যার অপরূপ সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করেই মহাকবি কালিদাস (Kālidāsa) ‘মেঘদূত’ কাব্য রচনা করেছিলেন। আর ‘মেঘদূত’-এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ কবি রবীন্দ্রনাথ গেয়ে উঠেছিলেন

“কবিবর, কবে কোন বিস্মৃত বরষে 
কোন পুণ্য আষাঢ়ের প্রথম দিবসে 
লিখেছিলে মেঘদূত। মেঘচন্দ্র শ্লোক,
বিশ্বের বিরহী যত সকলের শােক।”

বর্ষাকালের চিত্র

আষাঢ় মাস। সারাদিন আকাশ থাকে ঘন মেঘে ঢাকা। ঝরঝর বর্ষা সারাদিন ঝরছে তাে ঝরছেই- বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই। অবিরাম বর্ষণের এ যেন এক ছন্দলীলা। বৃষ্টিস্নাত পথের দুপাশে জমে ওঠে পানি। আশপাশের ডােবা-নালাও পানিতে টইটম্বুর। এমনি এক সময়ে হয়তাে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) লিখেছিলেন –

“নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে
তিল ঠাঁই আর নাহিরে
ওগাে আজ তােরা যাসনে ঘরের বাহিরে।”

বর্ষণ দিনের সন্ধ্যা পরিবেশ

বর্ষায় সারাদিন কাটে ঘরে বসেই। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাইরে বের হওয়া সম্ভব হয় না। একসময় আঁধার ঘন হয়ে এলে বােঝা যায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। তবে বাদল দিনে প্রকৃতির বুকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার অনেক আগেই মনে হয় যেন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। পশ্চিমাকাশে সূর্যাস্তের লাল আভা চোখে পড়ে না। চারদিক ঝাপসা। এ সময় প্রকৃতিকে মনে হয় স্নিগ্ধ ও সৌম্য দর্শন। 
একদিকে সন্ধ্যার অন্ধকার, অন্যদিকে বৃষ্টির প্রবলতা। দুইয়ে মিলে কী চমৎকার এ সন্ধ্যা প্রকৃতি! সন্ধ্যার এ রূপ ধরা পড়েছে রবীন্দ্রনাথের কবিতায়-
“আষাঢ় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, গেল রে দিন বয়ে
বাঁধন-হারা বৃষ্টি ধারা ঝরছে রয়ে রয়ে। 
একলা বসে ঘরের কোণে কী যে ভাবি আপন মনে,
সজল হাওয়া যূথীর বনে কী কথা যায় কয়ে-” 
বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় রাস্তায় কোনাে জনমানব থাকে না। রাখাল বালকেরা থাকে ঘরে আবদ্ধ। নিত্যদিনের মতাে এদিন গােধূলিলগ্নে গরুর পাল ঘরে ফেরে না। মাঠে খেলার উৎসব থাকে না। উঠানে বউঝিদের থাকে না ব্যস্ততা। দূরের কদম গাছটা শ্যামল সৌন্দর্যে মেঘের সাথি। ডালে বসে ভেজা কাক অসহায়ভাবে বিলাপ করে চলে। এমন বর্ষণ মুখর বাদল দিনে বৈষ্ণব পদকর্তা রাধার বিরহের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন – 
“এ ঘাের রজনী মেঘের ঘটা কেমনে আইলাে বাটে।
আঙিনার পাশে বধূয়া ভিজিছে দেখিয়া পরাণ ফাটে।” 
মেঘমেদুর আকাশ, ঘন মেঘের গর্জন, ঝরঝর বৃষ্টির শব্দ। পাতার মর্মর ধ্বনি। তাল, তমাল, শাল, পিয়াল বনের ওপর দিয়ে গুরু গুরু মেঘের মাদল বাজিয়ে বাদলের উৎসব শুরু হয়েছে। ডোবা পুকুরে বর্ষার ঘোলা পানি। গাছগুলো ভিজে ভিজে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। কবি বন্দে আলী মিয়া (Bande Ali Mia) বাদলের এ রূপটাকে বর্ণনা করেন এভাবে-
“দেয়া ঝর ঝর সারাদিন ধরি মেঘলা আকাশ হতে
গাছগুলো ভেজে চুপচাপ দাঁড়াইয়া কোনমতে।”
ধীরে ধীরে অন্ধকার আরাে গাঢ় হয়ে আসে। তখন বৃষ্টির ফোঁটা দেখা যায় না। মাঠের পাশের বটগাছটিও আর চোখে পড়ে না। শুরু হয় ব্যাঙের একটানা কোরাস। মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজানের সুমধুর ধ্বনি বর্ষণ সন্ধ্যায় পরিবেশে অন্য মাত্রা যােগ করে। দূরে কোথাও মাঝে মাঝে শােনা যায় বিপদগ্রস্ত শিয়ালের আর্তনাদ। এসময় রাজ্যের যত গান, যত সুর, যত কথা- সবই মনের কোণে এসে বাসা বাঁধে। আজ হৃদয়ে কেবলই বিরহ। কী যেন নেই, কিসের যেন অভাব। থেকে থেকে মন বলছে, এমন দিনে তারে বলা যায়। কিন্তু – কাকে বলা যায়? তার উত্তর তাে মনে আসে না। কবির ভাষায় –
“হৃদয়ে আজ ঢেউ দিয়েছে, খুঁজে না পাই কূল।
সৌরভে প্রাণ কাঁদিয়ে তােলে ভিজে বনের ফুল।
আঁধার রাতে প্রহরগুলি, কোন সুরে আজ ভরিয়ে তুলি,
কোন ভুলে আজ সকল ভুলি আছি আকুল হয়ে।”

হৃদয় দিয়ে এ সন্ধ্যার সবকিছু উপভোগ করা যায়, তবে মনের কথা মুখরতা পায় না। মনের দুয়ার খুলে যায় – নেচে ওঠে হিয়া।

উপসংহার 

যান্ত্রিক জীবনের শত কর্মব্যস্ততার মাঝে বাদলের একটি মুখর সন্ধ্যা যেন সব ক্লান্তি দূর করে দেয়। একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা মনের ওপর যে প্রভাব ফেলে, তাতে গতানুগতিক জীবন থেকে কিছু সময়ের জন্যে মানুষের মন উদাসীন হয়। মানুষ জীবনকে উপলব্ধি করে ভিন্ন চেতনায়। বর্ষায় কেন যেন ভালো লাগে সবকিছু, পৃথিবী, প্রকৃতি এমনকি বাশ ঝাড়ের ভেজা চিলটাকেও। তাই মনে মনে গুনগুন করে বেজে ওঠে-
“বর্ষারে, তুই মোর শ্যাম সমান,
মেঘ জটাজাল উড়িয়ে আকাশে 
ঝম ঝম  গাও তুমি গান 
তুমি মোর শ্যাম সমান।”

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button