মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার অথবা, মাদকাসক্তির অপকারিতা ও প্রতিকার অথবা, অথবা, মাদকাসক্তির পরিণাম ও প্রতিকার অথবা, সর্বনাশা মাদকাসক্তি। রচনা, Rochona, Rachona class 6,7,8,9,10,11 JSC SSC HSC
![]() |
source: istockphoto |
সূচনা
বর্তমানে সমাজ ও দেশের জন্য মাদকাসক্তি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকের নীল নেশা আজ তার বিশাল থাবা বিস্তার করে চলেছে এ দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এ এক তীব্র নেশা। হাজার হাজার তরুণ এ নেশায় আসক্ত। এ মরণনেশা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা না গেলে এ হতভাগ্য জাতির পুনরুত্থানের স্বপ্ন অচিরেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য অংশ আজ এক সর্বনাশা মরণনেশার শিকার। যে তারুণ্যের ঐতিহ্য রয়েছে সংগ্রামের, প্রতিবাদের, যুদ্ধ জয়ের, আজ তারা নিঃস্ব হচ্ছে মরণনেশার করাল ছোবলে। মাদক নেশার যন্ত্রনায় ধুঁকছে শত-সহস্র তরুণ প্রাণ। ঘরে ঘরে সৃষ্টি হচ্ছে হতাশা। ভাবিত হচ্ছে সমাজ।
মাদকাসক্তি কি
মাদকাসক্তি একটি স্নায়বিক ক্রিয়া। এর প্রভাবে ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা ও আচার-আচরণে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি যুব সম্প্রদায়ের এক আদিম প্রবণতা। শাব্দিক অর্থে মাদকাসক্তি বলতে ড্রাগ বা মাদকদ্রব্যের প্রতি এক প্রবল আকর্ষণকে বোঝায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, নেশা এমন একটি মানসিক বা শারীরিক অবস্থা, যার সৃষ্টি হয়েছে জীবিত প্রাণী ও মাদক ওষুধের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে।
মাদকদ্রব্য
মাদক শব্দের অর্থ হল - মত্ততা জন্মায় এমন দ্রব্য। অর্থাৎ নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যকেই মাদকদ্রব্য বলে। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে স্নায়বিক বৈকল্য দেখা দেয় ও বারবার ওই দ্রব্য গ্রহণের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। মাদকদ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমেই কেবল এ আসক্তি প্রশমিত হয়। অন্যথায় শরীরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদকদ্রব্য সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন – ‘আল খামরু মা খামারুল আখলাক’ অর্থাৎ মাদকদ্রব্য তা-ই যা মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে।
মাদকদ্রব্যের উৎস ও প্রকারভেদ
অবয়ব, ক্ষমতা ও মূল্যমানের বিভিন্নতার ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। মাদক দ্রব্যের মূল উৎস ঔষধি গাছ। এসব গাছের রাসায়নিক নির্যাস রােগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে একে অপপ্রয়ােগ করে নেশার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- পপি গাছ থেকে ব্যথানাশক মরফিন ও প্যাথেডিন ওষুধ তৈরি হলেও বর্তমানে একে আরও পরিশােধন করে তৈরি হচ্ছে আফিম ও হেরােইন। আবার ক্যানাবিস বা গাঁজা গাছও মূলত ঔষধি গাছ। এদেশে প্রচলিত মাদকদ্রব্যগুলাে হলাে- হেরােইন, প্যাথিডিন, মরফিন, আফিম, ক্যানাবিস, কোকেন, মারিজুয়ানা, গাঁজা, ভাং, চরস, হাশিশ, ফেনসিডিল, ঘুমের বড়ি, টিজিডিসিফ, মদ, বিয়ার ইত্যাদি।
মাদকদ্রব্যের ব্যাবহার পদ্ধতি
সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক ড্রাগ ব্যবসায়ীরা নানা ধরণের মাদকের ব্যবসা ফেঁদেছে। এসব মাদকের ব্যবহার পদ্ধতিও নানারকমের। ধূমপানের পদ্ধতি, নাকে শোকার পদ্ধতি, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ত্বকের নিচে গ্রহণের পদ্ধতি এবং সরাসরি রক্তপ্রবাহে অনুপ্রবেশকরণ পদ্ধতি। বিভিন্ন রকম ড্রাগের মধ্যে হেরোইন আজ সব নেশাকেই ছাড়িয়ে গেছে। এর আসক্তি অত্যন্ত তীব্র। নিছক কৌতূহল যদি কেউ হেরোইন সেবন করে তবে এই নেশা সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো তার ঘাড়ে চেপে বসে।
মাদকাসক্তির কারণ
গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বহুবিধ কারণে মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। যেমন- অবাঞ্ছিত আনন্দ লাভেরর বাসনা, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রয়াস, মাদকের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা, প্রতিকূল পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, বন্ধু-বান্ধব ও সঙ্গীসাথিদের প্রভাব, পারিবারিক পরিমণ্ডলে মাদকের প্রভাব, কৈশাের ও যৌবনের বেপরােয়া মনােভাব, বেকারত্ব, হতাশা ও আর্থিক অনটন, মানসিক অশান্তি, মাদকের সহজলভ্যতা, নৈতিক শিক্ষার অভাব ইত্যাদি। তাছাড়া কৌতূহল মেটাতে ও কুসঙ্গে পড়ে যারা একবার বা দু’বার মাদক গ্রহণ করেছে, তারা আর এর সংস্রব থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। নতুনত্বের প্রতি মানুষের চিরন্তন নেশা, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্জয়ের দুর্নিবার আকর্ষণ ও আপাত ভালাে লাগার অনুভূতি তাড়িত হয়েও অনেকে মাদক ব্যবসায়ীদের পেতে রাখা ফাঁদে ধরা দেয়। নৈরাজ্যের তীব্র যন্ত্রণায় দগ্ধীভূত হয়েও যুবসমাজ বেছে নেয় মাদকাসক্তি এর মাধ্যমে আত্মহননের পথ।
মাদকাসক্তির লক্ষণ
যখন কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, তখন তার মধ্যে কিছু কিছু লক্ষণ ও চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। যেমন : আচারআচরণের পরিবর্তন; রাতে ঠিকমতাে ঘুম না হওয়া এবং দিনে বসে বসে ঝিমানাে; গুছিয়ে কথা বলায় অপারগতা; খাবার গ্রহণের প্রতি অনীহা, চিত্তচাঞ্চল্য, মেজাজ কখনও খুব ভালাে, কখনও খুব খারাপ থাকা; মনােযােগ দেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকা; আড্ডায় বেশি সময় নষ্ট করা; আর্থিক চাহিদা বাড়তে থাকা; দিনের একটি বিশেষ সময়ে বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্য মন চঞ্চল হয়ে ওঠা; শরীর ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
মাদকাসক্তির প্রভাব
মাদকাসক্তির প্রভাবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে অধপতন পরিলক্ষিত হয়। মাদকাসক্তির প্রভাবে যুবকশ্রেণীর নৈতিক অধঃপতনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্বি পায়। অবৈধ মাদকের ব্যবহার এবং অপরাধ হাত ধরাধরি করে চলে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন বিসর্জন দিয়ে অকালে মৃত্যুবরণ , এমনকী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি নেশার খরচ জোগানাের জন্যই নানারকম সমাজবিরােধী কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে- ছিনতাই, জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, চুরি, পতিতাবৃত্তি, মাদক বিক্রয় ইত্যাদি। মাদকদ্রব্য মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তােলে, তার ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়, স্বাভাবিক জীবনে বেঁচে থাকার ইচ্ছা থাকে না। ফলে তারা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করে থাকে। যারা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ সেই তরুণসমাজ যদি এমনভাবে মাদকদ্রব্যের নেশায় আক্রান্ত হয়ে নিজের জীবন নষ্ট করে, তাহলে জাতির জন্যে তা হবে এক ভয়াবহ সর্বনাশ।
বাংলাদেশে গত এক দশকে মাদক সংক্রান্ত আটক, অবৈধ মাদকদ্রব্য আটক এবং চিকিৎসা সাহায্যপ্রার্থী লােকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদকদ্রব্য অপব্যবহারের সমস্যাসমূহ সন্ত্রাস, অপরাধ, পারিবারিক বিপর্যয়, স্বাস্থ্যসমস্যা ইত্যাদির সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। সােভিয়েত ইউনিয়নের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ফিওদর উগলভ বলেছেনঃ
মানবজাতির জন্যে মদ্যপান- যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও প্লেগের একান্ত প্রতিক্রিয়ার চেয়েও ভয়াবহ।
মাদকের ক্ষতিকর দিক
মাদক সমস্যা মানুষের সৃষ্ট শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা। মানবসম্পদ উন্নয়নে এ সমস্যা এক বিরাট বাধা। মাদকের অপব্যবহারে ব্যক্তি তাে বটেই, পুরাে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মাদকাসক্তির ফলে জনশক্তি দুর্বল ও নির্জীব হয়ে পড়ছে। মাদকের নিষ্ঠুর ছােবলে অকালে ঝরে যাচ্ছে বহু তাজা প্রাণ এবং অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে বহু তরুণের সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। মাদকদ্রব্য তরুণ সমাজের এক বিরাট অংশকে অকর্মণ্য ও অসচেতন করে তুলছে, অবক্ষয় ঘটাচ্ছে মূল্যবােধের। ফলে সুস্থ-সামাজিক বিন্যাস, সুন্দর পরিবেশ ও জাতীয় স্থিতিশীলতা বিরাট হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। রুদ্ধ হয়ে পড়ছে সামাজিক ভারসাম্য। নতুন কিছু আবিষ্কারের সম্ভাবনা স্তিমিত হয়ে পড়ছে। মানবিক মূল্যবােধ ও সামাজিক সম্পর্কের দারুণ অবনতি ঘটছে। মাদকদ্রব্যের ব্যবহার তাই গোটা বিশ্বকে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে, মৃত্যুর দিকে।
মাদকাসক্তির পরিণাম
যেকোনাে খারাপ জিনিসের পরিণামও খারাপ। মাদক খারাপ তাই এটি গ্রহণে মানুষের মাছে কুপ্রভাব দেখা দিবে এটিই স্বাভাবিক ব্যাপার। কোনােভাবে একবার কেউ মাদকাসক্ত হলে অচিরেই নেশা তাকে পেয়ে বসে। সে হয়ে পড়ে নেশার কারাগারে বন্দি। মাদকাসক্তির ফলে তার আচার-আচরণে দেখা যায় অস্বাভাবিকতা। তার চেহারার লাবণ্য হারিয়ে যায়। আসক্ত ব্যক্তি ছাত্র হলে তার বইপত্র হারিয়ে ফেলা, পড়াশােনায় মনোেযােগ কমে যাওয়া, মাদকের খরচ জোগাতে চুরি করা ইত্যাদি নতুন নতুন উপসর্গ দেখা দেয়। নেশার জন্য প্রয়ােজনীয় ড্রাগ না পেলে মাদকাসক্তরা প্রায়ই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। লােকের সঙ্গে এরা দুর্ব্যবহার করে। মাদকের প্রভাবে রােগীর শারীরিক প্রতিক্রিয়াও হয় নেতিবাচক। তার মননশক্তি দুর্বল হতে থাকে। তার শরীর ভেঙে পড়ে। ক্রমে স্নায়ু শিথিল ও অসাড় হয়ে আসে। এভাবে সে মারাত্মক পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।
মাদকের নেশা দ্রুত প্রসারের কারণ
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ক্ষেত্রে হতাশা ও দুঃখবােধ থেকে সাময়িক স্বস্তিলাভের আশা থেকেই এই মারাত্মক নেশা ক্রমবিস্তার লাভ করছে। পাশাপাশি এ কথাও সত্য যে, অনেক দেশে বিপথগামী মানুষ ও বহুজাতিক সংস্থা উৎকট অর্থ লালসায় বেছে নিয়েছে রমরমা মাদক ব্যবসার পথ। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে বিভিন্ন দেশের মাফিয়া চক্র। মাদকের ঐ কারবারিরা সারা বিশ্বে তাদের ব্যবসা ও হীনস্বার্থ রক্ষায় এই নেশা পরিকল্পিতভাবে ছাড়িয়ে দিচ্ছে।
মাদকদ্রব্য চোরাচালান
মাদকাসক্তির ব্যক্তিগত দিক ছাড়াও এর আরাে একটি ব্যবসায়িক দিক রয়েছে যা বিশাল অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত। মাদকদ্রব্য সাধারণত পাকিস্তান ও ভারত থেকে পাচার হয়ে যায় পশ্চিম ইউরােপে। বিশেষ করে গ্রেটব্রিটেন, পশ্চিম জার্মানি, ইতালি ও সুইজারল্যান্ডে। শ্রীলঙ্কাকে ব্যবহার করা হচ্ছে চোরাচালানের কেন্দ্রস্থল হিসেবে। বাংলাদেশকে হেরােইন চোরাচালানের করিডাের হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান গােল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গােল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের মাঝামাঝি হওয়ার ফলে বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বিশ্বব্যাপী মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও প্রতিক্রিয়া
মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ বিস্তার গােটা বিশ্বের জন্যে আজ উদ্বেগজনক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজজীবনে এটা এক নম্বর সমস্যা। প্রায় ৪ কোটি আমেরিকান নর-নারী কোকেন সেবন করে, কমপক্ষে ২ কোটি মারিজুয়ানা সেবন করে। ১১ লক্ষ হেরােইনসেবী। এই অবস্থা প্রাক্তন-সােভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলােতেও রয়েছে। কিন্তু সমস্যা শুধু এখন ইউরােপ-আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই অশুভ ছায়া এশিয়া-আফ্রিকার দেশে দেশে ইতােমধ্যেই আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার
উন্নত বিশ্বের দেশগুলাের ন্যায় আমাদের দেশেও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের তরুণরা এখন ভয়াবহ মাদকাসক্তির শিকার। ২০০৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত এক জরিপে জানা গিয়েছিল, বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা এখন প্রায় ৫০ লাখেরও বেশি। আর মাদকসেবীর অধিকাংশেরই বয়স ২১-৩৫ বছরের মধ্যে। তবে ৩৫০টি বৈধ গাঁজার দোকান আছে। দর্শনাতে মদ উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠান কেরু এন্ড কোম্পানি রয়েছে। বৈধ লাইসেন্স ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের আনাচেকানাচে দেশীয় মাদকদ্রব্য প্রচুর পরিমাণে তৈরি ও বিক্রি হয়। সেগুলাের মধ্যে রয়েছে গাঁজা, ভাং, বাংলা মদ, তাড়ি ইত্যাদি। এছাড়াও ফেন্সিডিল , পেথেড্রিন, ইয়াবা, মরফিন ও হেরােইনও রয়েছে। আমাদের মতাে দরিদ্র দেশে এসব নেশা সংক্রামক রােগের মতাে ছড়িয়ে পড়ছে। দুবেলা যেখানে সবার ভাত জোটে না সেখানেও যত্রতত্র এমনকী দারিদ্র পীড়িত বস্তি এলাকায় ড্রাগের সহজ প্রাপ্তি দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। মাদকদ্রব্য চোরাচালানের যাত্রাপথে বাংলাদেশের মানচিত্র অন্তর্ভুক্ত হওয়াতে এ সমস্যা আমাদের সমাজে দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
মাদকাসক্তি রোধে প্রচেষ্টা
এদেশের সুস্থ বিবেকবান ও চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ যুবসমাজের এহেন আসক্তি সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্বের সাথে চিন্তা ভাবনা করছেন। দেশকে বাঁচাতে হলে দেশের সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুপথে পরিচালিত করতে হলে যুব সমাজ থেকে এই মাদকাসক্তি অবশ্যই দূর করতে হবে। সুখের বিষয় দেশের সরকার ইতোমধ্যেই এ সম্পর্কে কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যেসব কারণে আমাদের প্রতিশ্রুতিময় যুবসমাজ মাদকাসক্তির প্রতি ঝুঁকে পড়েছে সেসব কারণ সমাজ থেকে দূর করতে হবে এবং সে জন্য আজ প্রয়োজন দায়িত্বশীল অভিভাবকের, তথা বয়স্ক নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ করেছি মাদকাসক্ত যুবক যুবতীদের সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্য মাদকাসক্তি চিকিৎসা ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।
মাদকাসক্তি প্রতিরোধের উপায়
মাদকাসক্তির করাল গ্রাস থেকে পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাতে হবে। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন। সমাজসেবীরা উৎকণ্ঠা ও উদবেগ প্রকাশ করছেন। দেশে দেশে নানা সংস্থা ও সংগঠন মাদকবিরােধী আন্দোলন শুরু করেছে। বিশ্বের প্রতিটি শাস্ত্র, বিষয় ও ধর্মে মাদককে নিষিদ্ধ ঘােষণা করা হয়েছে এবং এর প্রতিকারে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন দর্শন, সমাজতত্ত্ব, সাহিত্য প্রতিটি বিষয়ে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে এসব নেশার প্রতি নিষেধমূলক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয়েছে। তাই এসব অনুশাসন মেনে সুশৃঙ্খল জীবনযাপনই পারে মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ করতে। আমাদের দেশেও মাদকবিরােধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। বেতার, টিভি, সংবাদপত্র ইত্যাদি গণমাধ্যম মাদকবিরােধী জনমত গঠনে সক্রিয় হয়েছে। মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিরােধ গড়ে তােলার লক্ষ্য নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এসব তৎপরতার লক্ষ্য হচ্ছেঃ
(ক) মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তােলা।
(খ) বেকার যুবকদের জন্যে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
(গ) মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ভেষজ ও মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ।
(ঘ) সুস্থ বিনোদনমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে তরুণদের সম্পৃক্ত করে নেশার হাতছানি থেকে তাদের দূরে রাখা।
(ঙ) ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে মাদকাসক্তির মর্মান্তিক পরিণতি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা।
(চ) মানবিক মূল্যবোধ গঠন ও পরিবেশন।
(ছ) পিতা-মাতা কর্তৃক শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ।
(জ) ব্যক্তিগত ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি।
উপসংহার
ভীরু খুঁজে সাহস, দুর্বল খুঁজে শক্তি, দুঃখী খুঁজে সুখ। কিন্তু অধঃপতন ছাড়া তারা আর কিছুই পায় না। তারপরও এরই আকর্ষণে অসংখ্য সম্ভবনাময় তরুণ আজ অকালে মৃত্যুর দিকে ছুতে চলছে। এ অবস্থা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে। কঠোর ব্যবস্থার মাধমে বন্ধ করতে হবে মাদকদ্রব্যের চোরাচালান। এ মারাত্মক সমস্যা সম্পর্কে ঘরে ঘরে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। সুস্থ, সুন্দর, আনন্দ-উচ্ছল সমাজজীবন গড়ে তােলার লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য ব্যবহার রােধ করার বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্তির করাল গ্রাস থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার দায়িত্ব দল-মত নির্বিশেষে সবার।
Good bro🥰
ReplyDeleteআপনাকে ধন্যবাদ।
Deleteঅনেক সুন্দর হয়েছে। হ য ব র ল টিমকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
ReplyDelete