বাংলা রচনা

রচনা – কৃষিকাজে বিজ্ঞান

2.8/5 - (164 votes)
কৃষিকাজে বিজ্ঞান বাংলা রচনা/ কৃষিকাজে বিজ্ঞানের অবদান
রচনা সংকেত : সূচনা, মানবজীবনে কৃষির গুরুত্ব, কৃষির আধুনিকায়নে বিজ্ঞান, উন্নত বিশ্বের কৃষি, কৃষি ও বাংলাদেশ, উপসংহার। 

সূচনা 

বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাদ্য প্রয়ােজন। আর এ খাদ্য আসে কৃষিকাজের মাধ্যমে। একসময় কৃষিকাজ হতাে গতানুগতিক পদ্ধতিতে। তখন চাষাবাদ তথা খাদ্য উৎপাদনে প্রচণ্ড কষ্ট করতে হতাে। বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি বর্তমানে এক্ষেত্রে কষ্ট কমিয়ে দিয়েছে। কিছু কিছু দেশে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি কৃষিতে রীতিমতাে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। 

মানবজীবনে কৃষির গুরুত্ব

মানবজীবন ও মানবসমাজে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে এটি মানুষের আদিমতম জীবিকার উপায়। দেশে দেশে কৃষিই সমাজের মেরুদণ্ড, কৃষিই সমাজের ভিত্তি। সংগত কারণেই কৃষির ক্রমােন্নতিতেই সমাজের ও দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি। এই উন্নতিতে অনন্য ও অভাবনীয় সূচনা রেখেছে বিজ্ঞান। আজকের বিশ্বে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতাে কৃষিক্ষেত্রেও বিজ্ঞান তার সুদূরপ্রসারী কল্যাণী হাত। 

কৃষির আধুনিকায়নে বিজ্ঞান 

আঠারাে শতকের শেষদিকে এবং উনিশ শতকের শুরুর দিকে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের সূচনা ঘটে। এর ফলে কৃষকেরা কৃষিক্ষেত্রে উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতি ও কৃষিপদ্ধতির সাথে পরিচিত হয়। জন্তু আর কাঠের লাঙলের পরিবর্তে কৃষকদের হাতে আসে কলের লাঙল, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার। বিজ্ঞানের কল্যাণে উন্নত দেশগুলােতে জমিকর্ষণের পুরােনাে পদ্ধতিগুলাে লােপ পেয়েছে। বিজ্ঞানের উদ্ভাবন সেচ ব্যবস্থাতেও বহুবিধ পরিবর্তন এনেছে। কৃষকদের এখন বৃষ্টির জন্যে প্রকৃতির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে জমিতে পানিসেচের ব্যবস্থা করতে পারে। এক্ষেত্রে সেচের জন্যে ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎশক্তিচালিত পাম্প। অতিবৃষ্টিও আজ কৃষককে ভীত করছে না। বিজ্ঞানের বদৌলতে জমির অতিরিক্ত জল নিষ্কাশন আজ অত্যন্ত সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি সাধন করেছেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণা উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে কৃষিক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখছে তাও অভাবনীয়। বিশেষ করে কৃত্রিম উপায়ে উচ্চফলনশীল বীজ উৎপাদনে সাফল্য বিস্ময়কর। এসব বীজ সাধারণ বীজের তুলনায় ফসল উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে সময়ও কম নেয়। সুতরাং বীজ নিয়ে কৃষকদের অতীতের অনিশ্চয়তা দূর করেছে বিজ্ঞান। শক্তিশালী রাসায়নিক সার আবিষ্কৃত হওয়ায় ফসল উৎপাদনে এসেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। সাম্প্রতিককালে বিশ্বের বৃষ্টিহীন শুষ্ক মরু অঞ্চলে চাষাবাদ শুরু করার প্রচেষ্টা চলছে বিজ্ঞানের সহায়তায়। সেদিন দূরে নয় যেদিন এক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা সফলতা লাভ করবেন। 

উন্নত বিশ্বের কৃষি 

উন্নত দেশগুলাের কৃষিব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিজ্ঞাননির্ভর। জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তােলা পর্যন্ত সমস্ত কাজেই রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়া। বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক কৃষিযন্ত্র, যেমন- মােয়ার (শস্য-ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (ফসল কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (ফসল বাঁধার যন্ত্র), গ্রেশিং মেশিন (মাড়াই যন্ত্র), ম্যানিউর স্প্রেডার (সার বিস্তারণ যন্ত্র) ইত্যাদি উন্নত দেশগুলাের কৃষিক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের খামারে একদিনে ১০০ একর পর্যন্ত জমি চাষ হচ্ছে কেবল এক-একটি ট্রাক্টরের মাধ্যমে। সেগুলাে আবার একসাথে তিনচারটি ফসল কাটার যন্ত্রকে একত্রে কাজে লাগাতে সক্ষম। তারা বিভিন্নভাবে কৃষিকাজের এমন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে যার ফলে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা কৃষিকাজে ব্যাপকভাবে অগ্রগামী। যেমন বলা যায় জাপানের কথা। জাপানে জমির উর্বরাশক্তি বাংলাদেশের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে তারা এ দেশের তুলনায় ৬ গুণ বেশি ফসল উৎপাদন করছে। 

কৃষি ও বাংলাদেশ 

বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এ দেশের মাটি ও জলবায়ু বিশ্বের অন্য দেশগুলাের তুলনায় কৃষির অনুকূলে। কিন্তু উন্নত দেশগুলাে যখন প্রতিকূল অবস্থা ঘুচিয়ে ফসল উৎপাদনের বৈজ্ঞানিক নেশায় মেতেছে, সেখানে বাংলাদেশের কৃষকেরা তার কাঠের লাঙল আর একজোড়া জীর্ণ-শীর্ণ বলদ নিয়ে চেয়ে থাকছে আকাশের পানে। তবে ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জমি চাষের জন্য প্রায় ১ লক্ষ ইঞ্জিনচালিত চাষযন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও কৃষিকাজে ট্রাক্টর, সিডড্রিল (গতখনক), ধান-বুনন যন্ত্র, বিরিড্রাম সিডার, স্পেয়ার, উন্নত সেচপাম্প, ড্রায়াফ্রাম পাম্প, ট্রেডল পাম্প, রােয়ার পাম্প, শস্যকাটা যন্ত্র, ঘাসকাটা যন্ত্র, মাড়াই যন্ত্র ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ছে। এ কথা অবশ্য সত্যি যে, বাংলাদেশেও কৃষি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় সফলতা এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের শতকরা আশিভাগ কৃষক এখনাে সনাতন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে চলেছে। শিক্ষা, সচেতনতা, মূলধন, পুঁজি ইত্যাদির অভাবে তারা কৃষিকাজে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তারা শ্রম দিচ্ছে কিন্তু উপযুক্ত ফসল পাচ্ছে না। কেননা তারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করতে পারছে না।

উপসংহার 

বিজ্ঞান আজ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। উন্নত দেশগুলােতে বিজ্ঞানের সাহায্যে পাহাড় কেটে জঙ্গল পরিষ্কার করে বিভিন্নভাবে কৃষিজমি তৈরি করা হচ্ছে। ফসল আবাদের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা বিজ্ঞানকে কাজে লাগাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ তারা কৃষিক্ষেত্রে লাভ করছে বিরাট সাফল্য। কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সুজলাসুফলা আমাদের এই দেশে বিজ্ঞানের জাদুর ছোঁয়া আমরা যত বেশি কাজে লাগাতে পরব ততই কৃষি আমাদের দেবে সােনালি ফসলসহ নানা ফসলের সম্ভার। কৃষকদের সচেতনতা, সরকারি ও বেসরকারিভাবে তাদের সাহায্য প্রদান এবং বাংলাদেশে কৃষি নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাই পারে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে এবং বাংলাদেশকে একটি সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা দেশ হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button