“ভাবসম্প্রসারণ”
দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি
সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি।
মূলভাব
ভুল ত্যাগ করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় সত্যের পথকেই রুদ্ধ করে ফেলি। ফলে আমরা সত্যের দেখা পাই না।
সম্প্রসারিত ভাব
জীবন মানেই বৈচিত্র্যময় ও রহস্যপূর্ণ। সুখ-দুঃখ, ভালাে-মন্দ, সঠিক-বেঠিক মিলিয়েই মানুষের জীবন। ভুল ও ব্যর্থতা মানবজীবনে অহরহ ঘটা দুটি অনুষঙ্গ। কর্মময় জীবনে কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে, আসতে পারে ব্যর্থতাও। এ বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়তে হবে। ছেলে-মেয়েরা যদি ভুল করে ভয়ে চিরশিশু হয়ে গৃহকোণে পড়ে থাকে, তাহলে তারা কখনাে বড়াে কিছু হতে পারবে না। তাই ঘরের বাইরে গিয়ে পাপ-পুণ্যে, সুখে-দুঃখে, পতনে-উত্থানে তাদেরকে অনেক বড়াে হতে হবে।
দেশ-দেশান্তরে গিয়ে তাদেরকে গড়ে নিতে হবে স্বীয় অবস্থান। দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদেরকে যদি পদে পদে বিধি-নিষেধের ডােরে বেঁধে ভালাে ছেলে করে রাখা হয়, তাহলে তারা দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে ঘাতপ্রতিঘাতের সাথে সংগ্রাম করে আত্মবিশ্বাস অর্জন করার সুযােগ পাবে না। ফলে তাদের জীবনেরও অগ্রগতি হবে না। তাই মানবশিশুকে পিতামাতার সতর্ক প্রহরায়, ভালাে-মন্দের নাগালের বাইরে শীর্ণ, শান্ত আর সাধু করে রাখলে চলবে না, গৃহছাড়া, লক্ষ্মীছাড়া করে দিতে হবে, যাতে তারা সংঘাত-সংগ্রামের পথে সত্যকে খুঁজে নিতে পারে, নিজেরাই নিজেদের কল্যাণের পথটা বেছে নিতে পারে। ভুল না করার জন্য যারা দ্বার বন্ধ করে গৃহমধ্যে নিজেকে আটকে রাখে, তাদের জীবন অর্থহীন হতে বাধ্য। পার্থিব জীবন সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ ইত্যাদি দ্বারা পরিব্যাপ্ত। নিরবচ্ছিন্ন সত্য বা নিরঙ্কুশ মিথ্যা বলে কিছুই নেই। প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন ঘটিয়ে মানবজীবন সুষ্ঠু ও সুন্দর করা যায়। একথা সত্য যে, ভুল করার পরিণতিই মানুষকে ঠিক কাজ করতে তথা সত্যাশ্রয়ী হতে অনুপ্রাণিত করে। সুতরাং ভুলই সঠিক তথা সত্যের উৎসারক।
মন্তব্য
ভুল-ভ্রান্তি সত্যকে পাওয়ার প্রতিবন্ধক বা অন্তরায় নয়। বরং ভুল-ভ্রান্তি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেই মানুষ প্রকৃত সত্যকে উদঘাটন করে।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।