ইসলাম ও জীবনফজিলত
Trending

শবে বরাতের নামাজ, রোজা, আমল ও ফজিলত

4/5 - (51 votes)

“শবে বরাত” মূলত ফার্সি শব্দ। তবে হাদিসের ভাষায় বলা হয় ‘লাইলাতু নিসফি মিন শাবান’ বা মধ্য শাবানের রজনী । তাফসিরের ভাষায় এটাকে ‘লাইলাতুস সাক’, ‘লাইলাতুর রাহমাহ’ ও ‘লাইলাতুল বারাআত’ বলা হয়।

শবে মানে হচ্ছে রাত আর বরাত মানে হচ্ছে মুক্তি। অর্থাৎ শবে বরাত অর্থ হচ্ছে মুক্তির রাত। কারন এ রাতে আল্লাহ্‌ তার অগনিত বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।

হাদিসে এসেছে, হযরত আয়েশা (র) বলেন, রাসূল (সঃ) তাকে বলেছেন,

এই রাতে আল্লাহ ভেড়া বকরীর পশমের সংখ্যার পরিমানের চেয়েও বেশি সংখ্যা পরিমাণ গুনাহ্গারকে ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি – ৭৩৯)

আরও পড়ুন ঃ
যেভাবে দোয়া করলে আল্লাহ্‌ অবশ্যই তা কবুল করবেন
দোয়া কবুলের ২০ টি উত্তম সময়

শাবান মাস আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার নির্ধারিত ১২ মাসের একটি অন্যতম মাস। এ মাসের রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। এ মর্যাদার কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন।

শবে বরাত কত তারিখে?

শাবান মাসের ১৫ই রাত অর্থাৎ, ১৪ই শাবান দিবাগত রাতই হল শবে বরাত।

শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কিভাবে পড়বো?

শবে বরাতে নির্দিষ্ট পরিমান নামাজের কথা কোনো হাদিস এবং কুরআনে উল্ল্যেখ নেই। তবে হাদিসে পাওয়া যায়, রাসূল (সঃ) বলেন,

যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদাত করবে এবং দিনে রোজা পালন করবে। ইবাদাতের মধ্যে শ্রেষ্ট ইবাদাত হল নামাজ। সুতরাং নফল ইবাদাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হল নফল নামাজ। (ইবনে মাজাহ – ১৩৮৪)

তাই দুই রাকাত করে যত খুশি নামাজ পড়তে পারেন। নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। এখন নিয়ত করবেন কিভাবে? বলবেন আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার। এইভাবে নিয়ত করলে আপনার নামাজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে আপনি চাইলে আরবিতে এইভাবেও করতে পারেন।

নাওয়াইতু আন্‌ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা-আলা- রাকা’আতাই ছলা-তি লাইলাতিল বারায়াতিন্‌ নাফ্‌লি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্‌ কা’বাতিশ্‌ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

নামাজে   সূরাতুল ফাতিহা পড়ার পর তিন বার সূরা ইখলাস বা সূরা ওয়াকিয়াহ পড়তে হবে এমন কোন কথা হাদিসে নেই। রাসূল (সঃ) সুস্পষ্টভাবে এ ব্যাপারে কিছু বলেন নি। আপনি পবিত্র কুরআনের যেকোনো সূরাই পড়তে পারেন।

শবে বরাতের রোজা কয়টি ও কিভাবে রাখতে হয় ?

হাদিস শরীফে শবে বরাতের রোজার বিশেষ ফজিলত পাওয়া যায়।  রাসূল (সঃ) বলেনঃ  ১৫ শাবানের রাতে তোমরা নফল ইবাদাত করো এবং পরদিন রোজা রাখো। এই হাদিস দিয়ে শবে বরাতের একটি নফল রোজা রাখা প্রমাণিত হয়। তবে বিভিন্ন হাদিসে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখে তিন দিন তিনটি রোজা রাখতেন এবং তিনি নফল রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছেন। সে হিসেবে শাবান মাসে তিনটি রোজা রাখা যেতে পারে।

এ বিষয়ে অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, হযরত উম্মে সালমা ও হযরত আয়েশা (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

শাবান মাসে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) অধিকহারে রোজা রাখতেন। যেন তিনি গোটা শাবান মাসেই রোজা রাখতেন। (তিরমিজি – ১৫৫, ১৫৬, ১৫৯)

সে হিসেবে শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা অধিক সওয়াবের কাজ।

শবে বরাতের আমল ও ফজিলত

শবে বরাতের আমল অনেক ফজিলতপূর্ণ। আসুন জেনে নেই শবে বরাতে কি কি আমল করা যেতে পারে। এশার নামাজের পর নির্জনে (বাসায় নফল নামাজ পড়া উত্তম) দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়তে থাকবেন। কত রাকাত পড়লেন তা মুখ্য নয় বরং কতটা মনোযোগ ও দীর্ঘ্য করলেন সেটাই মুখ্য বিষয়।

হাদিস শরীফে আছে, হজরত  আয়েশা (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ একবার রাসূল (সঃ) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এতো দীর্ঘ্য সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল নাড়া দিলাম। এরপর তিনি সিজদা থেকে উঠে নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন:

হে আয়েশা তুমি কি আশঙ্খা হয়েছে? আমি বললাম ইয়া রাসূল (সঃ) আপনার দীর্ঘ্য সিজদা দেখে আমার আশঙ্খা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবী (সঃ) বললেনঃ তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম  আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ) ভালো জানেন।

তখন রাসূল (সঃ) বলেনঃ এটা হলো মধ্য শাবানের রাত।  এ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন। ক্ষমা পার্থনকারীদের ক্ষমা করে দেন। অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন, আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।  (শুআবুল ঈমান তৃতীয় খন্ড পৃষ্ঠা ৩৮২)

এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে নামাজে অত্যন্ত মনোযুগী হতে হবে। এবং বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।  তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে আল্লাহ দুই ধরণের ব্যক্তি ছাড়া বাকিদের ক্ষমা করে দেন।  তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি শিরক করে এবং অন্ন ব্যক্তি হলো যে হিংসা করে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন এই দুই ব্যক্তিদের মধ্যে পরে না যাই।

হযরত আলী (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করিম (সঃ) বলেছেনঃ  ১৪ই শাবান দিবাগত রাত যখন আসে তোমরা এই রাতটি ইবাদাত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। কেননা এই দিনে আল্লাহ সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি যাদের আমি ক্ষমা করবো? কোনো রিযিক প্রার্থী আছো কি যাদের আমি রিযিক দিবো? আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত যাদের  আমি উদ্ধার করবো? এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ আহ্বান করতে থাকেন। সুবহানাল্লাহ (হাদীসটি ইবনে মাজাহ তে বর্ণিত আছে)

এ রাতে কাজা হয়ে যাওয়া নামায পড়তে পারেন। তবে শুধুমাত্র ফরজ ও বিতির নামাজের কাজা পড়বেন।

শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে পারেন। যা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়।

বেশি করে তাওবা ও ইস্তেগফার করা।

বেশি করে দুরূদশরীফ পাঠ করা।

বেশি করে তসবিহ পাঠ করা (সুবহানাল্লাহ , আলহামদুলিল্লাহ , আল্লাহুআকবার)

বেশি করে দান-সদকা করা।  গরীব-মিসকিনদের সাহায্য করা।

ফজর নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা।

প্রতিবছরই শবে বরাত আসে। আসে মুক্তি ও ক্ষমার বার্তা নিয়ে। আল্লাহর ভয়ে কম্পমান হৃদয়ে এ রাতে তাওবার উদ্রেক হয়। তাওবাকারীর জন্য ক্ষমার সওগাত নিয়ে আসে শবেবরাত। পাপ আক্রান্ত মন এ রাতে পরিশুদ্ধ জীবনে ফেরার তাগিদ অনুভব করে।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button