বাদাম বিশেষ করে চিনা বাদাম আমাদের দেশে পরিচিত ও সহজলভ্য। সহজলভ্য বলেই হয়তো এর কদর কম। তবে বাদামে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ যা অনেকেই জানে না। তবে ভাজা বাদাম থেকে কাঁচা বাদামে পুষ্টিগুণ বেশী থাকে।
আসুন জেনে নেই বাদামে কি কি খাদ্য উপাদান রয়েছে।
বাদামে খাদ্য উপাদান
বাদামে রয়েছে প্রোটিন, প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রচুর আয়রন, ভিটামিন ই, ক্যারোটিন, ফাইবার, সেলেনিয়াম,ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, পটাশিয়াম এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।
কাঁচা বাদামের উপকারিতা
এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত কাঁচা বাদাম খান তাদের শরীরে এমন কিছু উপাদান প্রবেশ করে যা তাদেরকে একাধিক রোগ থেকে দূরে রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১. হাড় গঠনে ও মাংসপেশী মজবুত রাখে: বাদামের প্রোটিন দেহ গঠনে ও মাংসপেশী তৈরিতে সাহায্য করে। বাদামে রয়েছে ফসফরাস যা হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই তো প্রতিদিন এক বাটি করে বাদাম খাওয়া শুরু করলে জীবনে কোনও দিন হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
২. ব্রেইনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে: আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ব্রেইনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩. ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করে: বাদামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করে সেই সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আরও নানা উপকারে লেগে থাকে। যেমন, অ্যাক্সিডেটিভ ট্রেস কমিয়ে কোষেদের ক্ষত রোধ করে, সেই সঙ্গে ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
৪. দেহের পুষ্টির অভাব দূর করে: বাদামে উল্লেখিত সবগুলো উপাদানই শরীরের জন্যে অনেক উপকারি। একাধিক ক্রনিক রোগ দূর করতে উপাদানগুলো সাহায্য করে।
৫. ত্বক ও চুল সুন্দর রাখে: বাদামের ভিটামিন ই এবং ক্যারোটিন ত্বক ও চুল সুন্দর রাখে। শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
৬. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলের কারণে হার্টের রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই হার্ট কে সুস্থ রাখতে প্রতিদিনের ডায়েটে বাদাম রাখুন। বাদাম শরীরে ভালো কোলেস্টরলের পরিমান বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টরলের পরিমান কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে কমে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।
৭. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে: একাধিক গবেষণায় দেখা গাছে ম্যাগনেসিয়াম খনিজটির অভাবে ময়ের মধ্যেই ব্লাড প্রেসার মারাত্মক বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আর বেশি দিন যদি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, তাহলে হঠাৎ করে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই দেহে যাতে কোনও সময় ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দেখা না দেয় তাই নিয়মিত বাদাম খেতে পারেন।
৮. ওজন নিয়ন্ত্রণে বাদাম: বাদাম খেলে ক্ষিদে কমে যায় যার ফলে বেশি খাওয়ার প্রবণতাও কমে যায়। সেই সঙ্গে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে।
৯. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বাদাম: বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই কারণেই তো ডায়াবেটিকদের নিয়মিত বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। এক গবেষণায় দেখা গাছে নিয়মিত বাদাম খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২৫-৩৮ শতাংশ কমে যায়।
১০. কোষেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি: বাদামের ভিতর থাকা ভিটামিন – ই শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষেদের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের শরীরে যাতে কোনও ভাবে ক্ষতের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর তার কোনও প্রভাব পরে না।
বাদাম নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
অনেকে মনে করে বাদামে ফ্যাট আছে যা শরীরকে মোটা করে দেয়। কথাটি মোটেই সঠিক নয়। বাদামে ভালো ফ্যাট আছে যা শরীরের জন্যে খুবই ভালো। আর আমাদের ব্রেন এবং রক্তনালী ফ্যাট দিয়ে তৈরী।
বাদামে খারাপ কোলেস্টরল নেই বরং বাদাম ভালো কোলেস্টরল তৈরিতে সাহায্য করার পাশাপাশি খারপ কোলেস্টরল কমিয়ে দেয়।
অনেকে বলে থাকেন বাদামে ওজন বাড়িয়ে দেয় কারণ এতে নাকি অনেক ক্যালরি আছে। মোটেই তা নয়। এক মুঠো বাদাম খেলে শরীরে মাত্র ১৬১ ক্যালরি প্রবেশ করে। ফলে এই খাবারটি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনও ভয় থাকে না।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।
