ভাষণ : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন নিয়ে ভাষণ
‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণের নমুনা দেওয়া হল।
‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন’ শীর্ষক সেমিনার
বর্তমান সময়ের অন্যতম ইস্যু ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন’ শীর্ষক আলোচনা সভার সম্মানিত সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ এবং আগত সম্মানিত সুধীমণ্ডলী, আসসালামু আলাইকুম ।
সম্মানিত সুধীমণ্ডলী, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ আজ দেশের তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তার লাভ করেছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। এ দেশের মানুষ দীর্ঘ নয় মাস শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এ জন্য বিসর্জন দিতে হয়েছে ত্রিশ লাখ প্রাণ, মা-বোনের সম্ভ্রম।
অভ্যাগত অতিথিবৃন্দ, এ দেশের কিছু যুবক ও ছাত্রের নৈতিক অবক্ষয় যখন চরম অবস্থায় পৌঁছে যায় তখনই সন্ত্রাসের জন্ম হয়। কারণ জঙ্গি ও সন্ত্রাস এমন একটি মারাত্মক ব্যাধি, যা সম্পূর্ণ নৈতিকতাবর্জিত এবং অশুভ উদ্দেশ্যে পেশিশক্তির সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী নিজে যেমন নৈতিকভাবে কার্যক্রমে ধ্বংস হয়ে যায়, তেমনি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নয়, ক্ষতিগ্রস্ত করে গোটা দেশ ও জাতিকে। তাই আমাদের সবার মনে রাখা উচিত, পরিবারই সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষালয়। পিতা-মাতা পরিবারের প্রধান, তাই সন্তান যাতে সুষ্ঠুভাবে, সুন্দরভাবে, মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে, সে দায়িত্ব বর্তায় পিতা-মাতা ও অভিভাবকের ওপর।
দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সন্তান কুপথে চলে যায়। তা ছাড়া সন্তান কোথায় যায়, কী করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে অন্য কোথাও যায় কি না বা সময়মতো ঘরে ফিরে কি না— এসব বিষয়ে সবার আগে পিতা- মাতারই জানা থাকার কথা। কোথাও কোনো অনিয়ম দেখলে আগে থেকেই শাসন বা সংশোধন করা প্রয়োজন। অনেক মাতা-পিতা আছেন যাদের সন্তান এলাকায় সন্ত্রাস-মাস্তানির সাথে জড়িত বলে গর্ববোধ করেন। এতে সন্তানের মনে ভবিষ্যতে, সন্ত্রাসী হওয়ার উৎস জন্ম নেয়। আবার কিছু শিক্ষকের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহৃত হওয়ার কারণেও সন্ত্রাসী ছাত্রের জন্ম হতে পারে। কিন্তু তাঁরা জানেন না সৃষ্ট সন্ত্রাসী ছাত্রের হাতে হয়তো একদিন অপদস্ত হতে পারেন।
দুঃখের বিষয়, এ ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতায় জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে অচিরেই এর প্রতিকার প্রয়োজন। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দেশ হতে নির্মূল করতে হলে গ্রামে-গঞ্জে, তথা ইউনিয়ন উপজেলা ও জেলায় লেখক, কবি-সাহিত্যিক এবং সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটিতে স্থানীয় মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিতসহ ধর্মীয় ব্যক্তি এবং সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। শুধু প্রশাসন দিয়ে সন্ত্রাস দমন করা যাবে না। তাই রাজনৈতিক শক্তি ও সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে জঙ্গিবিরোধী জনমত গঠন করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা পক্ষের শক্তি এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শক্তিকে সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে। অন্যদিকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সুধীমণ্ডলী, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের আস্তানার জন্য আমরা বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরিনি। অরাজকতা সৃষ্টির জন্য প্রাণপণ লড়িনি। তাই আমাদের দেশের মানুষকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ ছাড়াও বিশ্বের বহু দেশে এখন এ ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ তার কালো থাবা বিস্তার করেছে। এটা এখন আমাদের দেশ নয়, বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, আমাদের প্রত্যেক মা-বাবার কাজ হওয়া উচিত তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পরীক্ষায় পারদর্শিতা দেখানোর মেশিন না বানিয়ে তাদের এমনভাবে উদ্বুদ্ধ, উৎসাহিত এবং সহযোগিতা করা, যেন তাদের ভেতর মননশীলতা, মানবিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে উঠতে পারে। অবশ্যই পড়াশোনায় তাদের যথাযথ সময় ও মনোযোগ দিতে হবে, যাতে তারা আলোকিত ও দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। প্রত্যেক মা-বাবাকে তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হতে হবে। তবে পাশাপাশি খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সুকুমারবৃত্তির অনুশীলনের পরিমিত ব্যবস্থা থাকতে হবে তাদের জন্য। এদিকেও আমাদের অভিভাবকদের দৃষ্টি রাখতে হবে।
তাই বর্তমানে শিক্ষক-অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উঠতি বয়সী যুবক-শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণ, চলাফেরার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে। তারা যাতে বিপথগামী না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের মনে রাখা উচিত, সন্ত্রাস কোনো মানুষেরই কাম্য নয়; সকলেই শান্তি চায়। যারা সন্ত্রাস করে তারাও অনেকেই বিভ্রান্ত
হয়ে করে। তাদের মধ্যে সচেতনতা ফিরিয়ে আনতে পারলে সুফল পাওয়া সম্ভব। তাই আসুন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে আমরা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ হই । দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যেকোনো মূল্যে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে জাতির কল্যাণে সম্মিলিতভাবে আমরা হই বদ্ধপরিকর। প্রয়োজনে দেশের জনগণ একত্রিত হয়ে সরকারের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনীকে সন্ত্রাসীদের ধরে দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। আশা করছি এসব পদক্ষেপ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষ সহায়ক হবে এবং একদিন তা সমূলে উৎপাটিত হবে। আর তখনই বাংলাদেশের সর্বত্র বইবে শান্তির সুবাতাস ।
পরিশেষে ধৈর্য ধরে আমার বক্তব্য শোনার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ।