বাংলা রচনা

“বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী” রচনা

Rate this post
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী রচনা

 বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী রচনা

ভূমিকা

বাঙালির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম বলব শেখ মুজিবর রহমান। তিনি আমাদের জাতির পিতা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তিনি রেখে গেছেন অসামান্য অবদান। অনন্যসাধারণ জীবনাদর্শ, দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর অবদান তাঁকে ইতিহাসে চিরভাস্বর করে রেখেছে। এই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধুর এই জন্মশতবার্ষিকী বাঙালির কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

বঙ্গবন্ধুর জীবন ইতিহাস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গােপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। ছয় ভাই-বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। বঙ্গবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কেটেছে নিজ গ্রামের গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে তিনি গােপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪৪ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং একই কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Dhaka) আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অন্যতম সংগঠক। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে শেখ মুজিবুর রহমান এর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৩ সালে এই দলের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৬ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক চক্র ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করে। বাঙালির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সবাইকে সাথে নিয়ে অসহযােগ আন্দোলন গড়ে তােলেন। তার আহ্বানেই বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে (Bangladesh) স্বাধীন করে।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনে প্রয়াসী হন। কিন্তু তার সােনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এসময় তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। সদ্যস্বাধীন জাতির জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতি নিয়ে আসে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড

বঙ্গবন্ধুর অবদান

বাঙালির অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান অপরিসীম। তিনি পাকিস্তানি শাসকচক্রের দীর্ঘ তেইশ বছরের অত্যাচারজুলুমের নাগপাশ থেকে বাঙালিকে মুক্ত করেন। অপরিসীম ত্যাগ ও দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে এনে দেন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন সবসময়। এর জন্যে তাকে অসংখ্যবার কারাবরণ করতে হয়েছে। একের পর এক তার বিরুদ্ধে মামলা চলেছে। তবু তিনি দমে যাননি, অন্যায়ের সাথে করেননি আপস। ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি আন্দোলনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল অগ্রণী ভূমিকা।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সারাবাংলায় চলে অসহযােগ আন্দোলন। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক সুবিশাল জনসমাবেশে বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের পূর্বেই, অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রায় পুরাে সময়টা বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি। কিন্তু তার সম্মােহনী নেতৃত্ব মানুষের ঐক্য, শক্তি ও প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। এর ফলেই আমরা পাই স্বাধীনতা।

স্বাধীন বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ পরিচালনার ভার নেন। তার নেতৃত্বে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ-এ চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান রচিত হয়। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছিলেন। মুক্তিযােদ্ধাদের কল্যাণের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তিযােদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা তারই অবদান। বঙ্গবন্ধুই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা প্রদান করে বিশ্বসভায় বাংলাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর চোখে ছিল সুখী, সমৃদ্ধ, সােনার বাংলাদেশ গড়ে তােলার স্বপ্ন।

জাতীয় জীবনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর গুরুত্ব

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে সরকার ১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ২৬শে মার্চ ২০২১ সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘােষণা করে। মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচিসমূহ কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। সে কারণে সরকার মুজিবর্ষের সময়কাল ১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত ঘােষণা করে। বাঙালির জাতীয় জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বাঙালি জাতির ইতিহাসে মহানায়কের আসন অলংকৃত করে আছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। অপশক্তির শাসন ও শােষণ থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তাই এই মহান মানুষটির জন্মের একশ বছর পূর্তি বাঙালির কাছে এক অনাবিল আনন্দের উপলক্ষ্য। 

উপসংহার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান না থাকলে আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশই পেতাম না। তার দৃঢ় নেতৃত্বই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল অনুপ্রেরণা। তিনিই বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ তথা মুজিব বর্ষ বাঙালির কাছে এক মহােৎসবের নাম।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button