নওরাজ বা নভরাজ উৎসব কী? কীভাবে এর প্রচলন হল?
ইরানে নওরাজ বা নভরাজ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপন করা হয়। ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই উৎসবের ব্যাপক তাৎপর্য রয়েছে। এটি একই সঙ্গে বসন্ত ঋতুরও সূচনা। পারস্য সম্প্রদায়ের লোকেরা এই দিনটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উদযাপন করে। তাদের ভাষায় ‘নও’ মানে নতুন, আর ‘রাজ’ মানে দিন। সব মিলিয়ে নওরাজ বা নভরাজ মানে ‘নতুন দিন’।
সাধারণত মার্চের ২০-২১ তারিখ নাগাদ সারা পৃথিবী জুড়ে এই দিনটি পালিত হয়। ইরানী সৌরবর্ষের প্রথম মাসের নাম হচ্ছে ‘ফারভারদিন’। আর ফারভারদিনের প্রথম দিনকেই বলা হয় ‘নওরোয’। সকল যুগে পৃথিবীর সকল জাতি-গোষ্ঠীর বর্ষপঞ্জিতে নতুন বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিনটি উৎসবের দিন হিসাবে পরিগণিত ও পালিত হয়ে এসেছে।
নওরোয উৎসবের প্রচলনের সঠিক সন-তারিখ অদ্যাবধি যদিও জানা যায়নি, তবে এটি যে অত্যন্ত প্রাচীন উৎসব তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে সব দেশে পার্সি সংস্কৃতি পৌঁছেছে বা রয়েছে, সেখানে এই উৎসব পালিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে ইরাক, ইরান, ভারত, আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়ার বেশ কিছু দেশ। আমেরিকা এবং ইউরোপের বহু জায়গাতেই এই উৎসব পালিত হয়। তবে এক এক দেশে এক এক ভাবে এই উৎসব পালিত হয়। সব দেশে এক ধরনের নিয়ম মানা হয় না।
ভারতে এই উৎসব অগস্ট মাসে পালন করেন অনেকে। তবে কোথাও কোথাও মার্চেও পালিত হয় উৎসবটি। এই বছর সারা বিশ্বের মতোই মার্চ মাসের ২১ তারিখ ভারতেও পালিত হচ্ছে নওরাজ বা নভরাজ। সুরাটের ব্যবসায়ীদের হাত ধরে অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই উৎসব ভারতে এসে পৌঁছোয়। এই ব্যবসায়ীরা মাঝে মধ্যেই ইরানে যেতেন। সেখানে থেকেই এই উৎসব তাঁরা নিয়ে আসেন।
পারস্যের রাজা জামশেদের কারণে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল বলেই মনে করা হয়। পার্সিদের পুরাণে বলা হয়েছে, জামশেদ পৃথিবীকে রক্ষা করেন। তাঁর শাসনে পারস্যে কখনও কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়নি। তাঁকে সম্মান জানাতেই এই উৎসব শুরু হয়। তার পরে পারস্য সম্প্রদায়ের হাত ধরে আস্তে আস্তে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ে এই উৎসবটি।
প্রাচীনকালে ইরানীরা প্রধানত দুটি উৎসব জাঁকজমকের সাথে পালন করত বলে জানা যায়। এ সম্পর্কে ‘লোগাতনামেয়ে দেহখোদা’য় (আলী আকবার দেহখোদা প্রণীত অভিধান) উল্লেখ করা হয়েছে। নওরোয বলতে সাত মাসব্যাপী গ্রীষ্মকালের শুরু বোঝাতো, আর মেহেরবান উৎসব শরৎকালের প্রথমভাগে হতো যা বর্তমানেও ইরানের যরথুস্ত্রী ধর্মাবলম্বীরা পালন করে থাকে। হাখামানশী রাজবংশের শাসনামলের অর্থাৎ ২৫০০ বৎসর পূর্বের নওরোয উৎসবের ব্যাপারে প্রতাত্ত্বিক নিদর্শন ও রেকর্ড পাওয়া যায়।