বাংলা রচনা

গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশ রচনা । এসএসসি এইচএসসি

5/5 - (22 votes)

গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশ রচনা

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমরা অনেকেই গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশ রচনাটির জন্য অনুরোধ করেছিলে। তাই বিভিন্ন বই থেকে পয়েন্ট সংগ্রহ করে সহজ ভাষায় সকল শ্রেণীর উপযোগী করে রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের উপকারে আসবে।

ভূমিকা

পরিবেশ মানব সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ। মানুষের রচিত পরিবেশ তারই সভ্যতার বিবর্তন ফসল। মানুষ নিজের প্রয়োজনে প্রকৃতিকে যেমন কাজে লাগাচ্ছে বা প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করছে, প্রকৃতিও তেমনি ছিন্ন-ভিন্ন-আহত রূপ নিয়ে মানুষের তথা সমগ্র প্রাণপুঞ্জের ঠিক সমপরিমাণ বিরোধিতা করতে তৎপর। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানের বিজয় গৌরবে মোহান্ধ মানুষ পৃথিবীর পরিবেশকে বিষাক্ত করেছে। আজও করছে। ছড়িয়ে দিয়েছে ক্ষতিকর সব আবর্জনা। তার ফল হয়েছে বিষময়। পরিবেশ দূষিত হয়েছে। আর দূষিত পরিবেশ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। তাই গোটা জীবজগতের অস্তিত্বই আজ বিপন্ন। একবিংশ শতাব্দীর সন্ধিক্ষণে মানবজাতি যখন সভ্যতার চরম শিখরে, ঠিক তখনই পরিবেশ আমাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে মহাবিপর্যয়ের দিকে। পরিবেশে দেখা দিয়েছে ‘গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া’। বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে চিন্তা ভাবনার অন্ত নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। পরিবেশের এই বিপর্যয়ের জন্যে মূলত আমরাই দায়ী।

গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া কী

গ্রীন হাউস কথাটির আভিধানিক অর্থ হল সবুজ ঘর, কার্যত এটি হচ্ছে কাচঘর, অর্থাৎ এর দেয়াল ও ছাঁদ কাচ নির্মিত; ফলে ঘরের ভেতরে আলো সহজে প্রবেশ করতে পারে। আলো প্রবেশ করায় ঘরের ভেতরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং তা কাচের দেয়ালের জন্যে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে না। ফলে কাচের ঘরটি কৃত্রিমভাবে গরম থাকে এর তাপমাত্রাও বাহিরের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হয়। বিশেষ ধরনের এ কাচের তৈরি ঘরকে বলা হয় গ্রীনহাউস। তদ্রূপ পৃথিবীকে ঘিরে এর চারপাশে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০ কি. মি. পর্যন্ত রয়েছে ওজোন স্তর, তবে এর ঘনত্ব সব জায়গায় একই রকম নয়। ২৩ কি. মি. ঊর্ধ্বে ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত কম। এখানে রয়েছে কার্বন-ডাইঅক্সাইড ও অপর কয়েকটি গ্যাসের এক বেষ্টনী। গ্যাসগুলোকে সমষ্টিগতভাবে গ্রীন হাউস গ্যাস বলা হয়। এটি রাসায়নিক পর্দা হিসেবে কাজ করে। গ্রীন হাউসের কাচের দেয়াল যেভাবে তার ভেতরের উষ্ণতাকে বাইরে বিকিরণ হতে বাধার সৃষ্টি করে, ঠিক তেমনিভাবে বায়ুমণ্ডলে সৃষ্ট রাসায়নিক পর্দা বা গ্যাসের দেয়াল ভূপৃষ্ঠের শোষিত তাপের বিকিরণ ঘটাতে বাধা দেয়। গ্যাসের এ দেয়াল আছে বলেই কিছু পরিমাণ তাপ বাধা পেয়ে পৃথিবীতেই থেকে যায় এবং এর প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে পৃথিবীতে যে উষ্ণতা থাকে তা জীবের পক্ষে বাসযোগ্য হয়। জীবের বসবাসের অনুকূল এরূপ পরিস্থিতিকে বলা হয় গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া

গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়ার কারণ

গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার ধ্বংসযজ্ঞের কথা ভেবে বিজ্ঞানীরা আজ শঙ্কিত। বিজ্ঞানীরা মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মানুষের অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডকে গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়ার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে নগরায়ন প্রক্রিয়া বেড়েছে, চলাচলের জন্য যানবাহন বেড়েছে, কর্মসংস্থানের জন্য অপরিকল্পিতভাবে কল-কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। অধিক জনসংখ্যার নগরায়ন সুবিধার জন্য গাছপালা ও বনভূমি নির্মূল করা হচ্ছে। যার ফলে প্রকৃতিতে প্রয়োজনের তুলনায় অক্সিজেন হ্রাস পাচ্ছে এবং কার্বন-ডাইঅক্সাইড উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, পরিবেশে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের বৃদ্ধির ফলে বায়ুতে মিশ্রিত হচ্ছে ক্লোরোফ্লুরো কার্বন নামক অতীব ক্ষতিকর এক প্রকার গ্যাস। এ গ্যাস ধ্বংস করছে ছাঁকুনি হিসেবে অতি বেগুনি রশ্মি পরিশ্রুতকারী ওজোন স্তরকে। আর এ অবস্থা গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। আবার অত্যধিক যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং যত্রতত্র স্থাপিত কল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও ধোঁয়াও গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে অধিক ফসলের আশায় জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রসূত হাউড্রোজেন বোমা ও পারমাণবিক বিস্ফোরণের রাসায়নিক তেজস্ক্রিয়তাও গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার জন্যে দায়ী।

গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়ার প্রভাব

গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার ধ্বংসাত্মক প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে গ্রীন হাউস গ্যাস ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং সাথে সাথে সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে চলে আসছে। এতে মানুষের ক্যান্সার রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ায় মেরু অঞ্চলের বরফ গলা শুরু হওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ভূপৃষ্ঠের নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে মরু অঞ্চলের সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস এর ন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগও গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফল। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন আগামী শতাব্দীর শেষভাগে পৃথিবীর সার্বিক আবহাওয়া মণ্ডলে ঘটবে ব্যাপক পরিবর্তন ও বড় ধরনের বিপর্যয়। সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা যা হবে, তা হচ্ছে উচ্চ পর্বত শিখরে, মেরু অঞ্চলে পুঞ্জীভূত বরফ গলে সাগর ও মহাসাগরের পানি ফাঁপিয়ে তুলবে। তলিয়ে যাবে অনেক শহর, বন্দর ও জনপদ।

গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশ

গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার প্রভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত বাংলাদেশ আজ মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশের উষ্ণতা বেশি। আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার বসতি স্থাপনের জন্য গাছপালা ও বনভূমি অবাধে উজাড় করে ফেলায় পরিবেশের তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কারণে বাংলাদেশে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে সেগুলো হল- ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন হেতু মূল ভূখণ্ড পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ ইত্যাদি।

বিশ্বপরিবেশে গ্রীনহাউসের প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব

পশ্চিম জার্মানির মারবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জেনার হেবারের গবেষণায় ধরা পড়েছে, অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব এরই মধ্যে ৫% ছাড়িয়ে গিয়েছে। আর সে কারণে অ্যান্টার্কটিকার ফাইটোপ্লাঙ্কটন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে দক্ষিণ গোলার্ধের সকল জীব নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং সেখানে আর কোনোদিন জীবের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। জাপানি পরিবেশীয় এজেন্সির রিপোর্টে দেখা যায়, ২০৩০ সাল নাগাদ গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা ১.৫০ সেলসিয়াস থেকে ৩.৫০ সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। যার ফলে বরফ ও হিমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা দেড় মিটার বেড়ে যাবে বলে ইতোমধ্যে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আভাস দিয়েছেন। এতে পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। সার্কভুক্ত বাংলাদেশ ও মালদ্বীপসহ পৃথিবীর সমুদ্র উপকূলবর্তী বিরাট জনপদ ধ্বংসের মুখোমুখি হবে এ আশঙ্কা আজ আর কল্পনা প্রসূত নয়।

গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়ার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা

গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া থেকে উদ্ভূত সমস্যাবলি মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য এক বিরাট হুমকিস্বরূপ। এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য নিম্নোক্ত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা যায়।

১.অবাধে গাছপালা নিধন ও বনভূমি উজাড় করা বন্ধ করতে হবে।
২. পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে কল-কারখানা স্থাপন করতে হবে এবং এগুলোর বর্জ্য নিষ্কাশনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ত্রুটিপূর্ণ গাড়ির চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।
৪. বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভবিষ্যতে নিমজ্জিত হওয়া থেকে ভূমিকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
৫. সমুদ্রের লবণাক্ত পানি যাতে স্বাদু পানির জলাশয় ও নদীতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার মারাত্মক প্রভাব বর্ণনা করে প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে গণসচেনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৭. প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠ্যসূচিতে গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে হবে।

উপসংহার

গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া শুধু বাংলাদেশ নয় বরং এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া রোধ করা মোটেই সম্ভব নয়। তাই এর ক্ষতিকর প্রভাব রোধকল্পে আন্তর্জাতিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে এবং এর প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ ও প্রশমনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button