হিসাব বিজ্ঞান মানুষের মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে – প্রতিবেদন
হিসাব বিজ্ঞান মানুষের মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
ভূমিকা
হিসাববিজ্ঞান হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের যাবতীয় আর্থিক কার্যাবলি যেমন: খরচ পরিশোধ, দেনা পাওনা, সম্পদ কয়-বিক্রয়, পণ্য ক্রয়-বিক্রয় এবং যাবতীয় আর্থিক হিসাবে সুষ্ঠুভাবে লিপিবদ্ধ করা যায়। হিসাববিজ্ঞান এর মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করা যায়। তাই হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয়। হিসাববিজ্ঞান এর মাধ্যমে শুধু আর্থিক লেনদেন হিসাব রাখা হয় না সেইসাথে লেনদেনকে শ্রেণীবদ্ধ ও বিশ্লেষণ করা হয়, যার ফলে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা খুব সঠিক ভাবে নিরূপণ করা যায়। ইতালিয়ান গণিতবিদ লুকা প্যাসিওলিকে হিসাববিজ্ঞান এর জনক বলা হয়।
হিসাব বিজ্ঞানের ধারণা
হিসাব বিজ্ঞান এমন একটি পক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাবতীয় আর্থিক কার্যাবলী হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা যায়। হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবসায়ের আর্থিক লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণিবদ্ধকরণ। ব্যাখাকরণের পদ্ধতি আলোচনা করা হয়। যার ফলে ব্যবাসায় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সিধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। তাই হিসাব বিজ্ঞানকে “ব্যবসায়ের ভাষা” বলা হয়।
হিসাব বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য
হিসাব বিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্য হল আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা। প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, দায় ও মালিকানা স্বত্বের পরিমাণ নির্ণয়ের মাধ্যমে আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করা সম্ভব। ব্যয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব। হিসাব বিজ্ঞান ব্যবসায়ের যাবতীয় ব্যয় সঠিকভাবে লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
হিসাব বিজ্ঞানের উৎপত্তি
প্রাচীন কালে মানুষ গাছের গায়ে, গুহায় বা পাথরে চিহ্ন দিয়ে হিসাব রাখত। পরবর্তীতে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সমাজ বিস্তার লাভ করে চালু হয় বিনিময় ও মুদ্রার প্রচলন। লেনদেন হিসাবের বইতে অঙ্কের মাধ্যমে লেখা শুরু হয়। ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে ইতালীয় গণিতবিদ লুকা প্যাসিওলি তার “সুম্মা ডি এরিথমেটিকা জিওমেট্রিয়া প্রপোরশনিয়েট প্রপোরশনালিটা” নামে একটি গ্রন্থে হিসাবরক্ষণের মূল নীতি “দুতরফা দাখিলা” ব্যাখ্যা করা হয়।
সমাজ ও পরিবেশের সাথে হিসাব বিজ্ঞানের সম্পর্ক
হিসাব বিজ্ঞান মুনাফা নির্নয়ের পাশাপাশি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সমাজ এবং পরিবেশের যাতে কোন রকম ক্ষতি না হয়, হিসাব বিজ্ঞান সেদিকটিতেও অবদান রাখে। ব্যাবসার মালিক সমাজ ও পরিবেশে সম্পর্কে কতোটা সজাগ তা হিসাব থেকে বুঝা যায়। শিল্প কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া আশেপাশের পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ব্যাবসায়ের মালিক ও হিসাবরক্ষকে এর প্রতিরোধে অর্থ খরচ করতে হয়। যা হিসাবের খাতায় লিপিবদ্ধ করতে হয়। তাছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সমাজের জন্য খরচ করতে হয়।
হিসাব বিজ্ঞান ও মূল্যবোধ
মূল্যবোধ হল ব্যক্তি ও সমাজের চিন্তা চেতনা বিশ্বাস ধ্যান-ধারণা প্রভৃতি সমন্বয়ে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা মানদন্ড যার দ্বারা মানুষ কোন বিষয়ে ভালো-মন্দ বিচার করে থাকে। মূল্যবোধ সৃষ্টিতে হিসাব বিজ্ঞানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যেমনঃ
ক) সততা ও দায়িত্ববোধ বিকাশ।
খ) ঋণ পরিশোধে সচেতনতা।
গ) সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববোধ সৃষ্টি।
ঘ) জালিয়াতি ও প্রতারনা প্রতিরোধ করে হিসাববিজ্ঞান মূল্যবোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
হিসাব বিজ্ঞান ও জবাবদিহিতা
নিজের কাজের জন্য তৃতীয় পক্ষের নিকট দায়বদ্ধতাই জবাবদিহিতা। এই জবাবদিহিতাকে গতিশীল রাখার জন্য হিসাববিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠানে সকল প্রকার আয়-ব্যয় ও বিনিয়োগের হিসাব রাখার জন্য নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হয়। বিনিয়োগের অর্থ সঠিক ব্যবহার ও অর্জিত মুনাফার সঠিক চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে হিসাবরক্ষকে জবাবদিহি করতে হয়। তাছাড়া সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন শুল্ক, ভ্যাট ও কর পরিশোধ করা হচ্ছে কিনা তার জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হয়।
উপসংহার
ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান তথা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থ সম্পর্কিত ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। অগণিত আর্থিক ঘটনার সামগ্রিক ফলাফল ও প্রভাব জানা কঠিন। এই কঠিন কাজকে সহজ করেছে হিসাব বিজ্ঞান। হিসাব বিজ্ঞান হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আর্থিক লেনদেনগুলো সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়।