
আসছে পবিত্র মাহে রমজান। অনেকেরই এই রোজা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। অনেকে আবার রোজার মাসালা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। তাই রোজা নিয়ে ৮ টি প্রশ্ন ও উত্তর যা আমাদের সকলের জানা উচিত।
রোজা নিয়ে ৮ প্রশ্ন-উত্তর
বিভিন্ন সোর্স থেকে বাছাই করে এখানে রোজা নিয়ে ৮ টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। সবগুলোর উত্তর দিয়েছেন সকলের প্রিয় শায়খ আহমাদুল্লাহ।
প্রশ্ন ১ : পিল খেয়ে মাসিক বন্ধ রেখে রোজা রাখা যাবে কিনা?
উত্তর: রমজান মাস আসলেই আমাদের মুসলিম মেয়েদের মধ্যে ইবাদাত করার আগ্রহের কারণে পিল খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখার একটা প্রবণতা দেখা যায়। মৌলিকভাবে এটা কোনো হারাম বা নাজায়েজ হবে না। যদি পিল খাওয়ার কারণে তার শরীরে খারাপ পার্শপ্রতিক্রিয়া না হয়। যদি মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণে তার শরীরে ক্ষতি হতে পারে তাহলে সেক্ষেত্রে পিল গ্রহণ করা জায়েজ নাই। যদি বড় কোনো ক্ষতির আশংখা না থাকে, শুধুমাত্র ইবাদাত করার জন্য মাসিক বন্ধ রাখবেন তাহলে পিল খেতে পারেন কোন অসুবিধা হবে না।
প্রশ্ন ২ : রমজান মাসে ফজরের আজানের পরে যদি স্বপ্নদোষ হয় তাহলে কি রোজা ভেঙে যাবে?
উত্তর: রমজান মাসে ফজরের নামাজের পরে আপনি ঘুমাইছেন যদি স্বপ্নদোষ হয় তাহলে রোজা নষ্ট হবে না । কারণ এটি আপনার ইচ্ছায় হয় নাই। অতএব, স্বপ্নদোষ যদি হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না । তবে অবশ্যই ফরজ গোসল করে নিতে হবে ।
প্রশ্ন ৩: ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখতে সমস্যা হলে করণীয় কি?
উত্তর: ডায়াবেটিসের রোগী রোজা রাখতে অসুবিধা হলে এটি রাখার অনেক সহজ পদ্ধতি আছে। আমরা অনেকেই মনে করি যে, একটু অসুবিধা হলে মনে হয় রোজা না রাখার সুযোগ আছে। আল্লাহ বলেছেন, “যে ব্যক্তি অসুস্থ থাকে সে অন্যসময় রোজা রাখলে হবে” কিন্তু অনেকেই সামান্য অসুস্থতার অজুহাতে রোজা রাখে না ।
অনেক যুবক ভাই আছেন রোজা রাখেন না কারণ কি? কারণ হল গেস্ট্রিক। আবার অনেক ডায়াবেটিস রোগী আছেন যারা রোজা রাখেন কিন্তু কোন অসুবিধা হয় না। আল্লাহ না করুক, যদি এমন হয় যে, রোজা রাখার ফলে তার ডায়াবেটিস এর কারণে মৃত্যু ঝুঁকি আছে, তাহলে তিনি রোজা না রেখে ফিদিয়া দিয়ে দিলেই হবে ।
প্রশ্ন ৪: রমজানে নারীদের জন্য বিশেষ কোন আমল আছে কি না?
উত্তর: নারীদের জন্য রমজান মাসে পুরুষদের মতোই স্বাভাবিক সব আমলগুলোই আছে । এর পাশাপাশি মায়েরা ইফতারের আগে দোয়া করা এটা থেকে তারা মাহরুম থাকেন । কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা ইস্তেগফার, দোয়া, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন। হাত তুলেই যে দোয়া করতে হবে এমন কোন কথা নেই । তাছাড়া বাসার পুরুষদেরকেও বেশি বেশি আমল করার পরামর্শ দিতে পারেন। তাদেরকে জামাতে সালাত আদায় করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করতে পারেন । এর জন্যও নারীরা সমান সোয়াব পাবেন।
প্রশ্ন ৫: খতম তারাবি ও সূরা তারাবির মধ্যে কি সোয়াবের কম বেশি আছে?
উত্তর: তারাবির নামাজে পুরো কুরআন তেলাওয়াত করে শেষ করা বা শুনা এটা অধিকতর উত্তম ও সোয়াবের কাজ। তবে তারাবি নামাজ তাড়াহুড়া করা উচিত নয় । যদি এমন হয় খতম তারাবি এতো দ্রুত পড়াচ্ছে যে, ইমাম সাহেব কি বলছেন কিছুই বুঝা না যায় তাহলে এর চাইতে সূরা তারাবি পড়া অনেক ভালো। আমাদের দেশে কিছু কিছু মসজিদে কে আগে খতম তারাবি শেষ করবে তার জন্য প্রতিযোগিতা চলে । এমনটি করা মোটেও উচিত নয় ।
প্রশ্ন ৬: তাহাজ্জুদের নামাজ কি জামাতে পড়া যায়? রমজানের অনেক মসজিদ-মাদ্রাসায় পড়তে দেখা যায় এটা কতটা সহীহ?
উত্তর: রমজানের দিনগুলোতে বিশেষ করে শেষের দিনগুলোতে যদি কেউ তাহাজ্জুদ পরে, তারসাথে অন্যকেউ সামিল হলো এমনটা জায়েজ আছে। তবে রমজানের বাহিরে সারা বছর জুড়ে অনেক জায়গায় দেখা যায় জামাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে । ফোকায়ে কেরাম সেটাকে নিষেধ করেন।
প্রশ্ন ৭: সেহরি খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি? রাত ১২টার পর সেহরি খেতে হবে নাকি এর আগে খেলেও রোজা হবে?
উত্তর: রাত ১২টার পর সেহরি খেতে হবে এমন কোন বাধ্য বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি সেহরি না খেলেও রোজা হবে। কিন্তু সেহরি খাওয়ার নিয়ম হল শেষের দিকে। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:
“এই উম্মত ততদিন কল্যাণে থাকবে যতদিন তারা শেষে সেহরি করবে”। শেষে সেহরি করবে মানে হলো রাতের একদম শেষের দিকে । রাসূলুল্লাহ (সা:) সেহরি খাওয়ার পর ৫০ টা আয়াত তিলায়াত করার মত সময় তার হাতে থাকতো ।
প্রশ্ন ৮: কাযা রোজার সাথে কাযা তারাবীহ আদায় করতে হবে কিনা?
উত্তর: কারো কোনো রোজা কাযা হলে রমজানের পর শুধু ওই কাযা রোজাটাই রাখলে চলবে এর জন্য কাযা তারাবীহ আদায় করতে হবে না । আমরা অনেকেই ভুল জানি। তারাবির সাথে রোজার কোন সম্পর্ক নেই ।