ব্যবসায় বিস্তারের ভিত্তি হলো ব্যবসায়িক পরিবেশ – প্রতিবেদন
ব্যবসায় বিস্তারের ভিত্তি হলো ব্যবসায়িক পরিবেশ বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি কর। সংকেতঃ ভূমিকা – ব্যবসায় পরিবেশের ধারণা – ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ – সামাজিক পরিবেশ – অর্থনৈতিক পরিবেশ – উপসংহার
ভূমিকাঃ যে কোন ব্যবসায় পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। কারণ ব্যবসায় পরিবেশ যদি ওই ব্যবসার জন্য উপযোগী না হয় তাহলে সে ব্যবসায় থেকে লাভবান হওয়া কষ্টকর। পরিবেশ দ্বারা মানুষের জীবনধারা, আচার আচরণ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং ব্যবসা প্রভাবিত হয়। পরিবেশ হল কোন অঞ্চলের জনগণের জীবনধারা অর্থনৈতিক কার্যাবলীকে প্রভাবিত করে এমন সব উপাদানের সমষ্টি। যেসব প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক উপাদান ধারা ব্যবসায় সংগঠন এর গঠন কার্যাবলী উন্নতি ও অবনতি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত হয় সেগুলোর সমষ্টিকে ব্যবসায়িক পরিবেশ বলে। তাই বলা হয়ে থাকে ব্যবসায় বিস্তারের ভিত্তি হলো ব্যবসায়িক পরিবেশ।
ব্যবসায় পরিবেশের ধারণাঃ ব্যবসায়িক পরিবেশ হল ব্যবসায় সংগঠন পরিবেষ্টিত সকল অবস্থা, উপাদান ও শক্তির সমষ্টি যা উক্ত ব্যবসায় বা তার ব্যবস্থাপকের কার্যকারিতা বা সফলতাকেই প্রভাবিত করে। সাধারণত রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, সরকারের নতুন নতুন নীতি ও আইন, কর ব্যবস্থা ও অবকাঠামো, শ্রমিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষার উন্নতি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদি উপাদান ব্যবসায়িক কার্যক্রম কে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। ব্যবসায় পরিবেশ অনুকূল বা প্রতিকূল হতে পারে। কোন স্থানের ব্যবসায় উন্নতি নির্ভর করে ব্যবসায়িক পরিবেশের উপর। পরিবেশ ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। ব্যবসায়িক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান বা এর উপর প্রভাব বিস্তারকারী শক্তিসমূহ নির্ণয়ের ছকের সাহায্যে তুলে ধরা হলোঃ
|
ব্যবসায় পরিবেশঃ সূত্র ব্যবসায় উদ্যোগ পাঠ্য বই-নবম দশম শ্রেণি। পৃঃ ৭ |
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশঃ যেসব উপাদান প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে ব্যবসার কার্যাবলীকে প্রভাবিত করে সেগুলাের সমষ্টি ব্যবসায় পরিবেশ। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক ও কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের প্রধান জীবিকা কৃষি এবং অধিকাংশ ব্যবসায় ও শিল্প কৃষিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। মােগল আমলে সােনারগাঁয়ে তারাবােতে গড়ে উঠে বিশ্বের রাজা রাণীর পছন্দের মসলিন। বঙ্গোপসাগরের অদূরে চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তীরে গড়ে উঠে বিশ্বের অন্যতম চট্টগ্রাম বন্দর যা Protogrando. আর দিনাজপুরের হিলি বন্দর Protopiqueno নামে পরিচিত। শীতলক্ষা নদীর তীরে নারায়নগঞ্জ বন্দর, ভৈরব নদীর তীরে | ভৈরব বন্দর গড়ে উঠে ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতার পর পরই সরকার অধিকাংশ ব্যবসায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ব করে সমাজতান্ত্রিক মানসিকতায় । কিন্তু অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতির কারনে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান লােকসান দিতে থাকে এবং অনেকগুলাে দেউলিয়া হয়ে পড়ে। প্রয়ােজন পড়ে বেসরকারীকরণের। অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বেসরকারী পর্যায়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারী মিলে সৃষ্টি হয় এক মিশ্র অর্থনীতির। সব মিলিয়ে এখন বিরাজ করছে এক ভিন্ন ব্যবসায় পরিবেশ।বপ্রাকৃতিক পরিবেশের অধিকাংশ উপাদানই বাংলাদেশে ব্যবসায় স্থাপনের জন্য অনূকুল। দেশের প্রায় সকল অংশই নদী বিধৌত। ছােট বড় মিলিয়ে এদেশে মােট ২৩০টি নদী রয়েছে। ফলে সহজেই এখানে কৃষিজাত বিভিন্ন শিল্প ও ভােগ্য পণ্যের কাঁচামাল উৎপন্ন করা সম্ভব। অন্যদিকে নদী পথে ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহন ও খরচ কম। তবে অনেক নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অনেক নদীতে চর পড়ে নদী পথ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপনের প্রয়ােজনীয় প্রাকৃতিক গ্যাস এদেশে বিদ্যমান। দেশে বিদ্যমান খনিজ, কয়লা, চুনাপাথর, কঠিন শিলা, খনিজ তৈল শিল্প বিকাশের সহায়ক। এ সকল প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। অসংখ্য নদী বিধৌত ও সমুদ্রবেস্টিত হওয়ায় মৎস্য শিল্প বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ এখানে বিদ্যমান।
সামাজিক পরিবেশঃ কোন দেশের সামাজিক পরিবেশ সেদেশের মানুষের আচার-আচরন, অভ্যাস, রুচি, পছন্দ-অপছন্দ, মূল্যবােধ, নৈতিকতা, সামাজিক, সাস্কৃতিক ও ধর্মীয়, শিক্ষা, ঐতিহ্য ইত্যাদি উপাদানে গঠিত হয়। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ যত বেশী অনুকুল ও উদার হবে ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রসারও তত দ্রুত হবে। সােনারগাঁয় এক সময় ব্যবসায়, শিক্ষা দীক্ষা, কৃষি, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক শিল্পে, কারু শিল্পে ছিল বিশ্ব সেরা। বর্তমানেও জামদানী শাড়ী তৈরি, জাহাজ নির্মাণ, বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে মুখস্থ নির্ভরতা থেকে বের করে আরও দক্ষ ও সৃজনশীল করতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রজম্ম শিল্প বাণিজ্য গবেষণায় আরও বেশী সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারবে। সাথে সাথে ব্যবসায় বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বৃদ্ধি করতে পারবে।
অর্থনৈতিক পরিবেশঃ জনগনের আয় ও সঞ্চয়, অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা, বিনিয়ােগ, মূলধন ও জনসম্পদ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে কোন দেশে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয় তাকে অর্থনৈতিক পরিবেশ বলে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উপাদানগুলাের কয়েকটির ভিত্তি বেশ মজবুত হলেও অনেক গুলাের ভিত্তি তেমন সুদৃঢ় নয়। চাহিদার তুলনায় প্রয়ােজনীয় মূলধনের অভাব, গ্রামীন জনগনের ব্যাংকিং সেবা ও ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্র শহরের তুলনায় কম। প্রশাসনিক জটিলতা, দালাল শ্রেণীর লােকদের হয়রানি, দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতি ইত্যাদি প্রতিকূল অবস্থা কাটাতে পারলে বাংলাদেশ ব্যবসায় বিকাশের আরও দ্রত অগ্রসর হতে পারবে। এর জন্য প্রয়ােজন গ্রামে গঞ্জে ব্যাংকিং ঋণ সুবিধা পৌছে দেওয়া এবং সহজ করা।
উপসংহারঃ একটি ব্যবসায় সংগঠন মূলত কতগুলাে উপাদান বা বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। মানবিক উপাদানের মধ্যে মালিক, ব্যবস্থাপক, শ্রমিক, কর্মী এবং বস্তুগত উপকরনের মধ্যে পুঁজি, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, বাজার ইত্যাদি গুরত্বপূর্ণ। এ সকল উপকরণের প্রাপ্যতা নিঃসন্দেহে পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই যেকোন দেশেই ব্যবসায় এর পরিবেশের উপাদান সমূহের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। তাই বলা হয়ে থাকে ব্যবসায় বিস্তারের ভিত্তি হলো ব্যবসায়িক পরিবেশ।
❤❤❤❤❤❤❤