
প্রিয় নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আজকে তোমাদের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের প্রথম অধ্যায় আকাইদ ও নৈতিক জীবন অধ্যায় থেকে ইসলাম নিয়ে আলোচনা করব।
আকাইদ কি
আকাইদ শব্দটি আকিদা শব্দের বহুবচন। আকাইদ অর্থ বিশ্বাসমালা। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলাের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসকেই আকাইদ বলা হয়। ইসলাম আল্লাহ তায়ালার মনোনীত একমাত্র দীন বা জীবন ব্যবস্থা। এর দুটি দিক রয়েছে। যথাঃ বিশ্বাসগত দিক ও আচরণগত বা প্রায়ােগিক দিক। ইসলামের বিশ্বাসগত দিকের নামই হলাে আকাইদ। আল্লাহ তায়ালা, নবী-রাসূল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, পরকাল, জান্নাত জাহান্নাম ইত্যাদি আকাইদের অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়গুলাে কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত। মুসলিম হতে হলে সবাইকে এ বিষয়গুলাের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। এরপর নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি প্রায়ােগিক দিক তথা ইবাদত পালন করতে হয়। বস্তুত আকাইদের বিষয়গুলাের উপর বিশ্বাসের মাধ্যমেই মানুষ ইসলামে প্রবেশ করে। এজন্য ইসলাম সম্পর্কে আলােচনার শুরুতেই আকাইদ বিষয়ে আলােকপাত করা হয়।
ইসলাম কি
ইসলাম আরবি শব্দ। আভিধানিক অর্থ হলাে আনুগত্য করা, আত্মসমর্পণ করা, শান্তির পথে চলা ইত্যাদি। ব্যবহারিক অর্থে আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল (স.)-এর আনুগত্য করাকে ইসলাম বলে। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার প্রতি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর নিকট পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করা, বিনা দ্বিধায় তার যাবতীয় আদেশ নিষেধের আনুগত্য করা এবং তার দেওয়া বিধান ও হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দেখানাে পথ অনুসারে জীবনযাপন করাকে ইসলাম বলা হয়।
একটি হাদিসে হযরত মুহাম্মদ (স.) সুন্দরভাবে ইসলামের মূল পরিচয় তুলে ধরেছেন । তিনি বলেনঃ

অর্থ: “ইসলাম হলাে- তুমি এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনাে ইলাহ নেই । আর মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল, সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমজানের রোজা পালন করবে এবং সামর্থ্য থাকলে বাইতুল্লাহর হজ আদায় করবে।” (বুখারি ও মুসলিম)।
আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে বহু আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান প্রেরণ করেছেন। এসব আদেশ-নিষেধ শরিয়ত হিসেবে প্রদান করেছেন। শরিয়তের সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ রূপ হলাে ইসলাম। এটি হলাে মানবজাতির জন্য নির্দেশিত সর্বশেষ ও সর্বোত্তম জীবন বিধান। আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে বলেনঃ

অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ইসলামই একমাত্র মনােনীত ধর্ম বা জীবনব্যবস্থা।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯)
সুতরাং ইসলাম হলাে আল্লাহ তায়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য ধর্ম । আর যিনি ইসলাম অনুসারে জীবন পরিচালনা করেন তাকে বলা হয় মুসলিম বা মুসলমান।
ইসলামের ভূমিকা
ইসলাম হলাে আল্লাহ তায়ালার প্রবর্তিত ধর্ম বা জীবন বিধান। এটি মানবজাতির জন্য আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ নিয়ামত । এটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের সকল বিষয় ও সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধানের দিকনির্দেশনা এতে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

অর্থ: “আজ আমি তােমাদের জন্য তােমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম; আর তােমাদের উপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তােমাদের জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনােনীত করলাম।” (সূরা আলমায়িদা, আয়াত ৩)।
মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কাজকর্মের যথাযথ দিকনির্দেশনা ইসলামে বিদ্যমান। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সকল বিষয়ই ইসলামে যথাযথভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এমনকি মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবন বা পরকালের অবস্থার বর্ণনাও ইসলামে রয়েছে। সুতরাং সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনার জন্য ইসলামের বিকল্প নেই। ইসলাম শব্দটি সিলমুন মূল ধাতু হতে নির্গত, সিলমুন অর্থ শান্তি । ইসলাম মানুষকে শান্তির পথে পরিচালনা করে। ইসলামি বিধি-বিধান মেনে চললে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে পরিপূর্ণ শান্তিময় জীবন লাভ করতে পারে। এ জন্য ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলা হয় । ইসলাম সর্বজনীন ধর্ম। এটি কোনাে কাল, অঞ্চল বা জাতির জন্য সীমাবদ্ধ নয়। অন্যান্য ধর্মের নামকরণ সে সব ধর্মের প্রবর্তক, প্রচারক, অনুসারী কিংবা জাতির নামে করা হয়েছে। কিন্তু ইসলাম সর্বজনীন ধর্ম হওয়ার কারণে এর নামকরণ কারও নামে করা হয়নি। বরং মহান আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে শান্তির পথে জীবন পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে এর নামকরণ করা হয়েছে ইসলাম।
ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব
ইসলাম শিক্ষা হলাে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। কোনাে কিছু বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমে সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হয়। যেমন সাঁতার কাটতে হলে প্রথমে সাঁতার কী, কীভাবে সাঁতার কাটতে হয় ইত্যাদি শিখতে হয়। গাড়ি চালাতে হলে গাড়ি ও গাড়ি চালনা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। ঠিক তেমনি ইসলাম অনুযায়ী জীবন পরিচালনার জন্য ইসলাম সম্পর্কে প্রথমে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। আর এর প্রধান মাধ্যম হলাে ইসলাম শিক্ষা। ইসলাম শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও আনুগত্য শিখতে পারি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা, উঠাবসা কীভাবে করতে হবে তা জানতে পারি । সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, ক্ষমা, বিনয়, নম্রতা ইত্যাদি গুণের অনুশীলন করতে পারি । লােভ, হিংসা, মিথ্যাচার, অহংকার, পরনিন্দা ইত্যাদি খারাপ অভ্যাস পরিহার করে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে পারি । সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, সহিষ্ণুতা, ধৈর্য, সহনশীলতা, পারস্পরিক সহযােগিতা, সহানুভূতি ইত্যাদির মাধ্যমে সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়ােজনীয় জ্ঞানার্জন করতে পারি। পরকালীন জীবনে জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় জানতে পারি। এককথায় ইসলাম শিক্ষার মাধ্যমে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও সফলতা লাভের দিকনির্দেশনা অর্জন করতে পারি।
কিছু বলার নাই