আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অর্থনীতির দশটি মৌলিক নীতি কার্যকর ভূমিকা রাখে। উপরোক্ত বিষয়ে অনাধিক ৩০০ শব্দের একটি প্রতিবেদন রচনা কর।
ভূমিকা
অর্থনীতি হল এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যাবহারযোগ্য দুষ্প্রাপ্য উপকরণসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনকারী কার্যাবলী আলোচনা করে। অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণ সাধন। বর্তমানে সম্পদের স্বল্পতার সমস্যাই অর্থনীতির মূল সমস্যা ।
অর্থনীতির দশটি মৌলিক নীতি
আমাদের সমাজে সম্পদ স্বল্পতার পরিপ্রেক্ষিতে অসীম অভাব মোকাবিলা করতে হয়। অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ম্যানকিউয়ের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তকে অর্থনীতির দশটি মৌলিক নীতির কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলঃ
- মানুষকে পেতে হলে ছাড়তে হয়ঃ সমাজে মানুষকে একটি দেওয়া-নেওয়ার (Trade offs) নীতি মেনে চলে। পছন্দমতো কোন কিছু পেতে গেলে আমাদেরকে পছন্দের অপর একটি জিনিস ত্যাগ করতে হয়।
- সুযোগ ব্যয়ঃ একটি দ্রব্যের অতিরিক্ত উৎপাদন পাওয়ার জন্য অপর দ্রব্যের উৎপাদন যে পরিমাণ ছেড়ে দিতে হয়। সেই ছেড়ে দেওয়ার পরিমাণই হল সুযোগ ব্যয় (Opportunity Cost)।
- যুক্তিবাদী মানুষ প্রান্তিক পর্যায় নিয়ে চিন্তা করেঃ মানুষ তার জীবনে চলার পথে অনেক সময় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অল্প কম বা অল্প বেশি পরিবর্তন করে সমন্বয় করে থাকে। এই যে অল্প কম বা অল্প বেশি পরিবর্তন তা হচ্ছে প্রান্তিক পরিবর্তন। প্রান্তিক পরিবর্তন থেকে মানুষ যে সুবিধা পায় সেটি হচ্ছে প্রান্তিক সুবিধা। একজন যুক্তিবাদী মানুষ সবসময় প্রান্তিক খরচের চেয়ে প্রান্তিক সুবিধা বেশি সেই পর্যায়ে চিন্তা করে।
- মানুষ প্রণোদনায় সাড়া দেয়ঃ প্রতিটি কাজের জন্য উৎসাহ বা প্রণোদনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষের ব্যবহারের পরিবর্তন তখনই ঘটে যখন খরচ বা সুবিধা সংক্রান্ত কোনো পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ মানুষ উদ্দীপনা বা অনুপ্রেরনায় সাড়া দেয়। যেমন যদি হঠাৎ করে কফির দাম বেড়ে যায় তাহলে মানুষ কফির পরিবর্তে চা কিনবে অথবা যদি পণ্যের উপর ছাড় পায় তাহলে মানুষ সে জিনিসটি কিনতে উৎসাহিত হবে। ঠিক তেমনি শ্রমিকরা যখন বোনাস বেশি পায় তখন তারা কাজে বেশি উৎসাহ পায়। অর্থাৎ যখন কোনো কিছুতে উদ্দীপনা বেশি পায় তখন মানুষ সেদিকে বেশি ঝুঁকে।
- বানিজ্যে সবাই উপকৃত হয়ঃ যদি বাণিজ্য না থাকত তাহলে প্রতিটি পরিবারকে নিজেদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্য উৎপাদন করতে হতো, বস্ত্র তৈরি করতে হতো তেমনি বসবাসের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করতে হতো। কিন্তু এটা কখনই একটি পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য একটি পরিবারকে আরেকটি পরিবারের উপর নির্ভর করতে হয়। অর্থাৎ দুটি পরিবারের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান।
- অর্থনৈতিক কার্যক্রম সংগঠিত করার জন্য বাজার একটি উত্তম পন্থাঃ অর্থনৈতিক কাজকর্ম সংগঠিত হয়ে থাকে বাজারব্যবস্থার মাধ্যমে। দ্রব্য বা সেবার দাম বাজারে চাহিদা ও যোগান এর মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এতে সমাজে অর্থনৈতিক কল্যাণ সর্বোচ্চ হয়।
- সরকার কখনও কখনও বাজারব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারেঃ অর্থনীতিবিদ এডাম স্মীথ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ এ উল্লেখ করেন বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয় ‘অদৃশ্য হাত’ দ্বারা। তবে বাজারব্যবস্থার অদৃশ্য হাত অনেক সময় মানুষের মৌলিক চাহিদা তথা খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে পারে না। তখন সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে।
- মানুষের জীবন যাত্রার মান নির্ভর করে সে দেশের দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন ক্ষমতার উপরঃ যে দেশের দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনের ক্ষমতা বেশি সেদেশের মানুষের উন্নত খাবার ব্যবস্থা, উন্নত স্বাস্থ্য সেবা ও নাগরিক সুবিধা বেশি এবং জীবনযাত্রার মানও উন্নত। অন্যদিকে কম উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দেশে মানুষের জীবনযাত্রার মান অনুন্নত।
- সরকার যখন অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপায় তখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়ঃ র্থনীতিতে অর্থের যোগান বেশি হলে মুল্যস্ফীতি হয়ে থাকে। আর এই অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করে যেকোনো দেশের সরকার। একটি দেশের সরকার যখন অধিকমাত্রায় মুদ্রা ছাপায় তখন ঐ দেশে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। ফলে সে দেশের অর্থের মূল্য বা মান কমে যায়।
- মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের মধ্যে বিপরীত সম্পর্কঃ দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়াকে মুদ্রাস্ফীতি বলে। আর কর্মক্ষেত্রের অপ্রতুলতাকে বলা হয় বেকারত্ব। অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি কমলে বেকারত্ব বাড়ে। আবার মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে বেকারত্ব কমে।
জাতীয় জীবনে নীতিগুলোর প্রভাব
জীবন যাপনে অর্থনীতির নীতিগুলোর ভুমিক পরিলক্ষিত হয়। মানুষের চাহিদার তুলনায় সম্পদের পরিমান কম। তাই মানুষকে তাদের পছন্দের একটি জিনিস পেতে হলে পছিন্দের অন্য জিনিসটিকে ত্যাগ করতে হচ্ছে। চিন্তা করতে হচ্ছে সুযোগ ব্যয়ের। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে মিটাতে হচ্ছে মানুষের চাহিদা। উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যে দেশে কম খরচে পাওয়া যায় সে দেশ থেকে কিনে বিনিময়ে সে দেশকে অন্য একটি পণ্যের সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্যের সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।